শ্রীযুক্ত নন্দলাল বসুর পাহাড়-আঁকা চিত্রপত্রিকার উত্তরে শুক বলে, গিরিরাজের জগতে প্রাধান্য; সারী বলে, মেঘমালা, সেই বা কী সামান্য,-- গিরির মাথায় থাকে। শুক বলে, গিরিরাজের দৃঢ় অচল শিলা; সারী বলে, মেঘমালার আদি-অন্তই লীলা,-- বাঁধবে কে-বা তাকে। শুক বলে, নদীর জলে গিরি ঢালেন প্রাণ; সারী বলে, তার পিছনে মেঘমালার দান,-- তাই তো নদী আছে। শুক বলে, গিরীশ থাকেন গিরিতে দিনরাত্র; সারী বলে, অন্নপূর্ণা ভরেন ভিক্ষাপাত্র ,-- সে তো মেঘের কাছে।
শুক বলে, হিমাদ্রি যে ভারত করে ধন্য; সারী বলে, মেঘমালা বিশ্বেরে দেয় স্তন্য ,-- বাঁচে সকল জন। শুক বলে, সমাধিতে স্তব্ধ গিরির দৃষ্টি; সারী বলে, মেঘমালার নিত্যনূতন সৃষ্টি,-- তাই সে চিরন্তন।
তোমারি নাম বলব নানা ছলে। বলব একা বসে, আপন মনের ছায়াতলে। বলব বিনা ভাষায়, বলব বিনা আশায়, বলব মুখের হাসি দিয়ে, বলব চোখের জলে। বিনা-প্রয়োজনের ডাকে ডাকব তোমার নাম, সেই ডাকে মোর শুধু শুধুই পুরবে মনস্কাম। শিশু যেমন মাকে নামের নেশায় ডাকে, বলতে পারে এই সুখেতেই মায়ের নাম সে বলে।
বাসনারে খর্ব করি দাও হে প্রাণেশ। সে শুধু সংগ্রাম করে লয়ে এক লেশ বৃহতের সাথে। পণ রাখিয়া নিখিল জিনিয়া নিতে সে চাহে শুধু এক তিল। বাসনার ক্ষুদ্র রাজ্য করি একাকার দাও মোরে সন্তোষের মহা অধিকার। অযাচিত যে সম্পদ অজস্র আকারে ঊষার আলোক হতে নিশার আঁধারে জলে স্থলে রচিয়াছে অনন্ত বিভব-- সেই সর্বলভ্য সুখ অমূল্য দুর্লভ সব চেয়ে। সে মহা সহজ সুখখানি পূর্ণশতদলসম কে দিবে গো আনি জলস্থল-আকাশের মাঝখান হতে, ভাসাইয়া আপনারে সহজের স্রোতে!