ভালোবাসা-ঘেরা ঘরে কোমল শয়নে তুমি যে সুখেই থাকো, যে মাধুরী এ জীবনে আমি পাইয়াছি তাহা তুমি পেলে নাকো। এই-যে অলস বেলা, অলস মেঘের মেলা, জলেতে আলোতে খেলা সারা দিনমান, এরি মাঝে চারি পাশে কোথা হতে ভেসে আসে ওই মুখ, ওই হাসি, ওই দু'নয়ান। সদা শুনি কাছে দূরে মধুর কোমল সুরে তুমি মোরে ডাকো-- তাই ভাবি, এ জীবনে আমি যাহা পাইয়াছি তুমি পেলে নাকো। কোনোদিন একদিন আপনার মনে শুধু এক সন্ধ্যাবেলা আমারে এমনি করে ভাবিতে পারিতে যদি বসিয়া একেলা-- এমনি সুদূর বাঁশি শ্রবণে পশিত আসি, বিষাদকোমল হাসি ভাসিত অধরে, নয়নে জলের রেখা এক বিন্দু দিত দেখা, তারি 'পরে সন্ধ্যালোক কাঁপিত কাতরে-- ভেসে যেত মনখানি কনকতরণীসম গৃহহীন স্রোতে-- শুধু একদিন-তরে আমি ধন্য হইতাম তুমি ধন্য হতে। তুমি কি করেছ মনে দেখেছ, পেয়েছ তুমি সীমারেখা মম? ফেলিয়া দিয়াছ মোরে আদি অন্ত শেষ করে পড়া পুঁথি-সম? নাই সীমা আগে পাছে, যত চাও তত আছে, যতই আসিবে কাছে তত পাবে মোরে। আমারেও দিয়ে তুমি এ বিপুল বিশ্বভূমি এ আকাশে এ বাতাস দিতে পারো ভরে। আমাতেও স্থান পেত অবাধে সমস্ত তব জীবনের আশা। একবার ভেবে দেখো এ পরানে ধরিয়াছে কত ভালোবাসা। সহসা কী শুভক্ষণে অসীম হৃদয়রাশি দৈবে পড়ে চোখে। দেখিতে পাও নি যদি, দেখিতে পাবে না আর, মিছে মরি বকে। আমি যা পেয়েছি তাই সাথে নিয়ে ভেসে যাই, কোনোখানে সীমা নাই ও মধু মুখের-- শুধু স্বপ্ন, শুধু স্মৃতি, তাই নিয়ে থাকি নিতি, আর আশা নাহি রাখি সুখের দুখের। আমি যাহা দেখিয়াছি, আমি যাহা পাইয়াছি এ জনম-সই, জীবনের সব শূন্য আমি যাহে ভরিয়াছি তোমার তা কই।
তোমাদের বিয়ে হল ফাগুনের চৌঠা, অক্ষয় হয়ে থাক্ সিঁদুরের কৌটা। সাত চড়ে তবু যেন কথা মুখে না ফোটে, নাসিকার ডগা ছেড়ে ঘোমটাও না ওঠে; শাশুড়ি না বলে যেন "কী বেহায়া বৌটা'। "পাক প্রণালী'র মতে কোরো তুমি রন্ধন, জেনো ইহা প্রণয়ের সব-সেরা বন্ধন। চামড়ার মতো যেন না দেখায় লুচিটা, স্বরচিত ব'লে দাবি নাহি করে মুচিটা; পাতে বসে পতি যেন নাহি করে ক্রন্দন। যা-ই কেন বলুক-না প্রতিবেশী নিন্দুক খুব ক'ষে আঁটা যেন থাকে তব সিন্দুক। বন্ধুরা ধার চায়, দাম চায় দোকানি, চাকর-বাকর চায় মাসহারা-চোকানি-- ত্রিভুবনে এই আছে অতি বড়ো তিন দুখ। বই-কেনা শখটারে দিয়ো নাকো প্রশ্রয়; ধার নিয়ে ফিরিয়ো না, তাতে নাহি দোষ রয়। বোঝ আর না-ই বোঝ কাছে রেখো গীতাটি, মাঝে মাঝে উলটিয়ো মনুসংহিতাটি; "স্ত্রী স্বামীর ছায়াসম' মনে যেন হোঁশ রয়। যদি কোনো শুভদিনে ভর্তা না ভর্ৎসে, বেশি ব্যয় হয় পড়ে পাকা রুই মৎস্যে, কালিয়ার সৌরভে প্রাণ যবে উতলায়, ভোজনে দুজনে শুধু বসিবে কি দু'তলায়। লোভী এ কবির নাম মনে রেখো, বৎসে। দ্রুত উন্নতিবেগে স্বামীর অদৃষ্ট দারোগাগিরিতে এসে শেষে পাক্ ইষ্ট। বহু পুণ্যের ফল যদি তার থাকে রে, রায়বাহাদুর-খ্যাতি পাবে তবে আখেরে; তার পরে আরো কী বা রবে অবশিষ্ট।