তোমারে শতধা করি ক্ষুদ্র করি দিয়া মাটিতে লুটায় যারা তৃপ্ত-সুপ্ত হিয়া সমস্ত ধরণী আজি অবহেলাভরে পা রেখেছে তাহাদের মাথার উপরে। মনুষ্যত্ব তুচ্ছ করি যারা সারাবেলা তোমারে লইয়া শুধু করে পূজা-খেলা মুগ্ধভাবভোগে, সেই বৃদ্ধ শিশুদল সমস্ত বিশ্বের আজি খেলার পুত্তল। তোমারে আপন-সাথে করিয়া সমান যে খর্ব বামনগণ করে অবমান কে তাদের দিবে মান! নিজ মন্ত্রস্বরে তোমারেই প্রাণ দিতে যারা স্পর্ধা করে কে তাদের দিবে প্রাণ! তোমারেও যারা ভাগ করে, কে তাদের দিবে ঐক্যধারা!
জড়ায়ে আছে বাধা, ছাড়ায়ে যেতে চাই, ছাড়াতে গেলে ব্যথা বাজে। মুক্তি চাহিবারে তোমার কাছে যাই চাহিতে গেলে মরি লাজে। জানি হে তুমি মম জীবনে শ্রেয়তম, এমন ধন আর নাহি যে তোমা-সম, তবু যা ভাঙাচোরা ঘরেতে আছে পোরা ফেলিয়া দিতে পারি না যে। তোমারে আবরিয়া ধুলাতে ঢাকে হিয়া মরণ আনে রাশি রাশি, আমি যে প্রাণ ভরি তাদের ঘৃণা করি তবুও তাই ভালোবাসি। এতই আছে বাকি, জমেছে এত ফাঁকি, কত যে বিফলতা, কত যে ঢাকাঢাকি, আমার ভালো তাই চাহিতে যবে যাই ভয় যে আসে মনোমাঝে।
কী কথা বলিব বলে বাহিরে এলেম চলে, দাঁড়ালেম দুয়ারে তোমার-- ঊর্ধ্বমুখে উচ্চরবে বলিতে গেলেম যবে কথা নাহি আর। যে কথা বলিতে চাহে প্রাণ সে শুধু হইয়া উঠে গান। নিজে না বুঝিতে পারি, তোমারে বুঝাতে নারি, চেয়ে থাকি উৎসুক-নয়ান। তবে কিছু শুধায়ো না-- শুনে যাও আনমনা, যাহা বোঝ, যাহা নাই বোঝ। সন্ধ্যার আঁধার-পরে মুখে আর কণ্ঠস্বরে বাকিটুকু খোঁজো। কথায় কিছু না যায় বলা, গান সেও উন্মত্ত উতলা। তুমি যদি মোর সুরে নিজ কথা দাও পুরে গীতি মোর হবে না বিফলা।