রাগ কর নাই কর, শেষ কথা এসেছি বলিতে-- তোমার প্রদীপ আছে, নাইকো সলিতে। শিল্প তার মূল্যবান, দেয় না সে আলো, চোখেতে জড়ায় লোভ, মনেতে ঘনায় ছায়া কালো অবসাদে। তবু তারে প্রাণপণে রাখি যতনেই, ছেড়ে যাব তার পথ নেই। অন্ধকারে অন্ধদৃষ্টি নানাবিধ স্বপ্ন দিয়ে ঘেরে আচ্ছন্ন করিয়া বাস্তবেরে। অস্পষ্ট তোমারে যবে ব্যগ্রকণ্ঠে ডাক দিই অত্যুক্তির স্তবে তোমারে লঙ্ঘন করি সে-ডাক বাজিতে থাকে সুরে তাহারি উদ্দেশে আজো যে রয়েছে দূরে। হয়তো সে আসিবে না কভু, তিমিরে আচ্ছন্ন তুমি তারেই নির্দেশ কর তবু। তোমার এ দূত অন্ধকার গোপনে আমার ইচ্ছারে করিয়া পঙ্গু গতি তার করেছে হরণ, জীবনের উৎসজলে মিশায়েছে মাদক মরণ। রক্তে মোর যে-দুর্বল আছে শঙ্কিত বক্ষের কাছে তারেই সে করেছে সহায়, পশুবাহনের মতো মোহভার তাহারে বহায়। সে যে একান্তই দীন, মূল্যহীন, নিগড়ে বাঁধিয়া তারে আপনারে বিড়ম্বিত করিতেছ পূর্ণ দান হতে, এ প্রমাদ কখনো কি দেখিবে আলোতে। প্রেম নাহি দিয়ে যারে টানিয়াছ উচ্ছিষ্টের লোভে সে-দীন কি পার্শ্বে তব শোভে। কভু কি জানিতে পাবে অসম্মানে নত এই প্রাণ বহন করিছে নিত্য তোমারি আপন অসম্মান। আমারে যা পারিলে না দিতে সে-কার্পণ্য তোমারেই চিরদিন রহিল বঞ্চিতে।
ভেবেছি কাহারো সাথে মিশিব না আর কারো কাছে বর্ষিব না অশ্রুবারিধার। মানুষ পরের দুখে, করে শুধু উপহাস জেনেছি, দেখেছি তাহা শত শত বার যাহাদের মুখ আহা একটু মলিন হলে যন্ত্রণায় ফেটে যায় হৃদয় আমার তারাই -- তারাই যদি এত গো নিষ্ঠুর হল তবে আমি হতভাগ্য কী করিব আর! সত্য তুমি হও সাক্ষী, ধর্ম তুমি জেনো ইহা ঈশ্বর! তুমিই শুন প্রতিজ্ঞা আমার। যার তরে কেঁদে মরি, সেই যদি উপহাসে তবে মানুষের সাথে মিশিব না আর।
পরম আত্মীয় বলে যারে মনে মানি তারে আমি কতদিন কতটুকু জানি! অসীম কালের মাঝে তিলেক মিলনে পরশে জীবন তার আমার জীবনে। যতটুকু লেশমাত্র চিনি দুজনায়, তাহার অনন্তগুণ চিনি নাকো হায়। দুজনের এক জন এক দিন যবে বারেক ফিরাবে মুখ, এ নিখিল ভবে আর কভু ফিরিবে না মুখোমুখি পথে, কে কার পাইবে সাড়া অনন্ত জগতে! এ ক্ষণমিলনে তবে, ওগো মনোহর, তোমারে হেরিনু কেন এমন সুন্দর! মুহূর্ত-আলোক কেন, হে অন্তরতম, তোমারে চিনিনু চিরপরিচিত মম?