প্রত্যুষে দেখিনু আজ নির্মল আলোকে নিখিলের শান্তি-অভিষেক, তরুগুলি নম্রশিরে ধরণীর নমস্কার করিল প্রচার। যে শান্তি বিশ্বের মর্মে ধ্রুব প্রতিষ্ঠিত, রক্ষা করিয়াছে তারে যুগ-যুগান্তের যত আঘাতে সংঘাতে। বিক্ষুব্ধ এ মর্তভূমে নিজের জানায় আবির্ভাব দিবসের আরম্ভে ও শেষে। তারি পত্র পেয়েছ তো কবি, মাঙ্গলিক। সে যদি অমান্য করে বিদ্রূপের বাহক সাজিয়া বিকৃতির সভাসদ্রূপে চিরনৈরাশ্যের দূত, ভাঙা যন্ত্রে বেসুর ঝংকারে ব্যঙ্গ করে এ বিশ্বের শাশ্বত সত্যেরে, তবে তার কোন্ আবশ্যক। শস্যক্ষেত্রে কাঁটাগাছ এসে অপমান করে কেন মানুষের অন্নের ক্ষুধারে। রুগ্ন যদি রোগেরে চরম সত্য বলে, তাহা নিয়ে স্পর্ধা করা লজ্জা বলে জানি-- তার চেয়ে বিনা বাক্যে আত্মহত্যা ভালো। মানুষের কবিত্বই হবে শেষে কলঙ্কভাজন অসংস্কৃত যদৃচ্ছের পথে চলি। মুখশ্রীর করিবে কি প্রতিবাদ মুখোশের নির্লজ্জ নকলে।
অজানা জীবন বাহিনু, রহিনু আপন মনে, গোপন করিতে চাহিনু-- ধরা দিনু দুনয়নে। কী বলিতে পাছে কী বলি তাই দূরে ছিনু কেবলি, তুমি কেন এসে সহসা দেখে গেলে আঁখিকোণে কী আছে আমার মনে। গভীর তিমিরগহনে আছিনু নীরব বিরহে, হাসির তড়িৎ-দহনে লুকানো সে আর কি রহে। দিন কেটেছিল বিজনে ধেয়ানের ছবি সৃজনে, আনমনে যেই গেয়েছি শুনে গেছ সেইখনে কী আছে আমার মনে। প্রবেশিলে মোর নিভৃতে, দেখে নিলে মোরে কী ভাবে, যে দীপ জ্বেলেছি নিশীথে সে দীপ কি তুমি নিভাবে। ছিল ভরি মোর থালিকা, ছিঁড়িব কি সেই মালিকা। শরম দিবে কি তাহারে অকথিত নিবেদনে যা আছে আমার মনে।