এক যে ছিল চাঁদের কোণায় চরকা-কাটা বুড়ী পুরাণে তার বয়স লেখে সাত-শ হাজার কুড়ি। সাদা সুতোয় জাল বোনে সে হয় না বুনন সারা পণ ছিল তার ধরবে জালে লক্ষ কোটি তারা। হেনকালে কখন আঁখি পড়ল ঘুমে ঢুলে, স্বপনে তার বয়সখানা বেবাক গেল ভুলে। ঘুমের পথে পথ হারিয়ে, মায়ের কোলে এসে পূর্ণ চাঁদের হাসিখানি ছড়িয়ে দিল হেসে। সন্ধ্যেবেলায় আকাশ চেয়ে কী পড়ে তার মনে। চাঁদকে করে ডাকাডাকি, চাঁদ হাসে আর শোনে। যে-পথ দিয়ে এসেছিল স্বপন-সাগর তীরে দু-হাত তুলে সে-পথ দিয়ে চায় সে যেতে ফিরে। হেনকালে মায়ের মুখে যেমনি আঁখি তোলে চাঁদে ফেরার পথখানি যে তক্খনি সে ভোলে। কেউ জানে না কোথায় বাসা, এল কী পথ বেয়ে, কেউ জানে না এই মেয়ে সেই আদ্যিকালের মেয়ে। বয়সখানার খ্যাতি তবু রইল জগৎ জুড়ি-- পাড়ার লোকে যে দেখে সেই ডাকে, "বুড়ী বুড়ী"। সব-চেয়ে যে পুরানো সে, কোন্ মন্ত্রের বলে সব-চেয়ে আজ নতুন হয়ে নামল ধরাতলে।
অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি। তখন ছিল দখিন হাওয়া আধ-ঘুমো আধ-জাগা, তখন ছিল সর্ষে-খেতে ফুলের আগুন লাগা, তখন আমি মালা গেঁথে পদ্মপাতায় ঢেকে পথে বাহির হয়েছিলেম রুদ্ধ কুটির থেকে। অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি। বসন্তের সে মালা আজ কি তেমন গন্ধ দেবে নবীন-সুধা-ঢালা? আজকে বহে পুবে বাতাস, মেঘে আকাশ জুড়ে-- ধানের খেতে ঢেউ উঠেছে নব-নবাঙ্কুরে। হাওয়ায় হাওয়ায় নাইকো রে হায় হালকা সে হিল্লোল, নাই বাগানে হাস্যে গানে পাগল গণ্ডগোল। অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি। হল কালের ভুল, পুবে হাওয়ায় ধরে দিলেম দখিন হাওয়ার ফুল। এখন এল অন্য সুরে অন্য গানের পালা, এখন গাঁথো অন্য ফুলে অন্য ছাঁদের মালা। বাজছে মেঘের গুরু গুরু, বাদল ঝরো ঝরো-- সজল বায়ে কদম্ববন কাঁপছে থরোথরো। অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি।