তোমার বীণার সাথে আমি সুর দিয়ে যে যাব তারে তারে খুঁজে বেড়াই সে সুর কোথায় পাব। যেমন সহজ ভোরের জাগা, স্রোতের আনাগোনা, যেমন সহজ পাতায় শিশির, মেঘের মুখে সোনা, যেমন সহজ জ্যোৎস্নাখানি নদীর বালু-পাড়ে, গভীর রাতে বৃষ্টিধারা আষাঢ়-অন্ধকারে খুঁজে মরি তেমনি সহজ, তেমনি ভরপুর, তেমনিতরো অর্থ-ছোটা আপনি-ফোটা সুর-- তেমনিতরো নিত্য নবীন, অফুরন্ত প্রাণ, বহুকালের পুরানো সেই সবার জানা গান। আমার যে এই নূতন-গড়া নূতন বাঁধা তার নূতন সুরে করতে সে যায় সৃষ্টি আপনার। মেশে না তাই চারি দিকের সহজ সমীরণে, মেলে না তাই আকাশ-ডোবা স্তব্ধ আলোর সনে। জীবন আমার কাঁদে যে তাই দণ্ডে পলে পলে, যত চেষ্টা করি কেবল চেষ্টা বেড়ে চলে। ঘটিয়ে তুলি কত কী যে বুঝি না এক তিল, তোমার সঙ্গে অনায়াসে হয় না সুরের মিল।
ওরে ভীরু তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার। হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার। তুফান যদি এসে থাকে তোমার কিসের দায়-- চেয়ে দেখো ঢেউয়ের খেলা, কাজ কী ভাবনায়। আসুক-নাকো গহন রাতি, হোক-না অন্ধকার-- হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার। পশ্চিমে তুই তাকিয়ে দেখিস মেঘে আকাশ ডোবা-- আনন্দে তুই পুবের দিকে দেখ্-না তারার শোভা। সাথি যারা আছে, তারা তোমার আপন ব'লে ভাব' কি তাই রক্ষা পাবে তোমারি ওই কোলে? উঠবে রে ঝড়, দুলবে রে বুক, জাগবে হাহাকার-- হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার।