হায় রে তোরে রাখব ধরে, ভালোবাসা, মনে ছিল এই দুরাশা। পাথর দিয়ে ভিত্তি ফেঁদে বাসা যে তোর দিলেম বেঁধে, এল তুফান সর্বনাশা। মনে আমার ছিল যে রে ঘিরব তোরে হাসির ঘেরে-- চোখের জলে হল ভাসা। অনেক দুঃখে গেছে বোঝা বেঁধে রাখা নয় তো সোজা, সুখের ভিতে নহে তোমার অচল বাসা। এবার আমি সব-ফুরানো পথের শেষে বাঁধব বাসা মেঘের দেশে। ক্ষণে ক্ষণে নিত্যনব বদল কোরো মূর্তি তব রঙ-ফেরানো মায়ার বেশে। কখনো বা জ্যোৎস্না-ভরা কখনো বা বাদল-ঝরা খেয়াল তোমার কেঁদে হেসে। যেই হাওয়াতে হেলাভরে মিলিয়ে যাবে দিগন্তরে সেই হাওয়াতেই ফিরে ফিরে আসবে ভেসে। কঠিন মাটি বানের জলে যায় যে বয়ে, শৈলপাষাণ যায় তো ক্ষ'য়ে। কালের ঘায়ে সেই তো মরে অটল বলের গর্বভরে থাকতে যে চায় অচল হয়ে। জানে যারা চলার ধারা নিত্য থাকে নূতন তারা, হারায় যারা রয়ে রয়ে। ভালোবাসা, তোমারে তাই মরণ দিয়ে বরিতে চাই, চঞ্চলতার লীলা তোমার রইব সয়ে।
কেমনে কী হল পারি নে বলিতে, এইটুকু শুধু জানি-- নবীন কিরণে ভাসিছে সে দিন প্রভাতের তনুখানি। বসন্ত তখনো কিশোর কুমার, কুঁড়ি উঠে নাই ফুটি, শাখায় শাখায় বিহগ বিহগী বসে আছে দুটি দুটি। কী যে হয়ে গেল পারি নে বলিতে, এইটুকু শুধু জানি-- বসন্তও গেল, তাও চলে গেল একটি না কয়ে বাণী। যা-কিছু মধুর সব ফুরাইল, সেও হল অবসান-- আমারেই শুধু ফেলে রেখে গেল সুখহীন ম্রিয়মাণ।