রসজ্ঞ ম্যাথ্যু আর্নলড্ ফরাসি ভাবুক জুবেয়ারের সহিত ইংরাজি-পাঠকদের পরিচয় করাইয়া দেন। যখন যাহা মনে আসিত জুবেয়ার তাহা লিখিতেন কিন্তু প্রকাশ করিতেন না। তাঁহার রচনা প্রবন্ধরচনা নহে, এক-একটি ভাবকে স্বতন্ত্ররূপে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখা। পদ্যে যেমন সনেট, যেমন শ্লোক, গদ্যে এই লেখাগুলি তেমনি।
আজ আমার উপর ভার পড়েছে এই অনুষ্ঠানে তোমাদের কাছে গান সম্বন্ধে কিছু বুঝিয়ে দেওয়া। গান শেখা ভালো এ কথা বলা সহজ, যেমন সহজ বলা যে, চুরি করা ভালো নয়। মেয়েদের গলার গান কানে ভালো শুনায়-- এ তো সাদা কথা, ধরা কথা-- তাতে আবহাওয়া বেশ একটু সুমধুর হয়। গানের কথা আমি বলি গানেতেই, গানের কথা আমাকে ফের যদি বলতে হয় ভাষাতে, তবে আমার উপর কি জুলুম হয় না? পুরানো পুঁথিপত্র খুঁজলে দেখবে গান সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ কী বলেছে-- যথেষ্ট বলেছে।
৫৩-সংখ্যক প্রস্তাবে বড়দাদা সৌন্দর্য সম্বন্ধে যে প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছেন তাহার রীতিমতো উত্তর দেওয়া দুঃসাধ্য। সে সম্বন্ধে দু-একটা কথা যাহা বলিবার আছে বলি। "নিজে না মাতিলে অন্যকে মাতানো যায় না" এ কথাটা অতি অল্প জায়গায় খাটে। অধিকাংশ স্থলেই যে মাতাইবে তাহাকে মাতিলে চলিবে না। "মাতা" বলিতে বুঝায় প্রবৃত্তির তরঙ্গে বুদ্ধির হাল ছাড়িয়া দেওয়া। নিজের উপরে নিজের প্রভুত্ব চলিয়া যাওয়া। বাগ্মী, যিনি বক্তৃতা করিয়া দেশ মাতাইতে চান, তাঁহার এমনি ঠিক থাকা আবশ্যক যে, "মাতা' না মাতা তাঁহার সম্পূর্ণ ইচ্ছাধীন হয়। বাষ্পকে অধিকারায়ত্ত করিয়া যেমন কল চলে তেমনি নিজের মনোবৃত্তিকে সম্পূর্ণ দখলে রাখিয়া তবে দশজনের মনোবৃত্তি নিজের অভিপ্রায়মতো উদ্রেক করা যাইতে পারে। তবে এই কথা বলা যায় বটে যাহার হৃদয় নাই সে [অন্যের] হৃদয় বিচলিত করিতে পারে না-- কিন্তু প্রবৃত্তির প্রাবল্যবশত নিজের উপর যাহার অধিকার নাই সেই আপনি যতই চঞ্চল হৌক অন্যকে ... অতএব "নিজে না মাতিলে অন্যকে মাতানো যায় না" এ কথা [ঠিক] নহে।