আমি যে বিষয় উত্থাপন করিতে প্রবৃত্ত হইতেছি তাহা আপনা হইতেই অনেক দূর পয্যর্ন্ত অগ্রসর হইয়াছে। শ্রোতৃবর্গের মধ্যে এমন কেহই নাই যাঁহাকে এ সম্বন্ধে কিছু নূতন কথা বলিতে পারি বা যাহাঁকে প্রমাণপ্রয়োগ-পূর্ব্বক কিছু বুঝান আবশ্যক। আমরা সকলেই একমত। আমার কর্ত্তব্য কেবল উপস্থিত সকলের হইয়া সেই মত ব্যক্ত করা; সেইজন্যই সাহস-পূর্বক আমি এখানে দন্ডায়মান হইতেছি। নতুবা জটিল রাজনৈতিক অরণ্যের মধ্যে সরল পথ কাটিয়া বাহির করা আমার মত নিতান্ত অব্যবসায়ী লোকের ক্ষুদ্র ক্ষমতার অতীত। বিষয়টা আপাতত যেরূপ আকার ধারণ করিয়াছে তাহা আমার নিকটেও তেমন দুর্ব্বোধ ঠেকিতেছে না। আমাদের শাসনকর্ত্তারা স্থির করিয়াছেন মন্ত্রীসভায় আরো গুটিকতক ভারতবর্ষীয় লোক নিযুক্ত করা যাইতে পারে। এখন কথাটা কেবল এই দাঁড়াইতেছে, নির্ব্বাচন কে করিবে? গবর্ণমেন্ট করিবেন, না আমরা করিব?
কিন্তু ইহা বলিয়া রাখি,ভাবুক লোকদিগের নিজের প্রতি মনোযোগ দিবার যেমন অল্প অবসর ও আবশ্যক আছে, এমন আর কাহারো নহে। যাহাদের পরের সহিত মিশিতে হয় তাহাদের যেমন চব্বিশ ঘন্টা নিজের চর্চ্চা করিতে হয়, এমন আর কাহাকেও না। তাহাদের দিনরাত্রি নিজেকে মাজিতে-ঘষিতে সাজাইতে-গোজাইতে হয়। পরের চোখের কাছে নিজেকে উপাদেয় করিয়া উপহার দিতে হয়। এইরূপে যাহারা পরের সহিত মেশে,নিজের সহিত তাহাদের অধিকতর মিশিতে হয়। ইহারাই যথার্থ আত্মম্ভরি। ভাবুকগণ কবিগণ সর্বদাই নিজেকে ভুলিয়া থাকেন। কারণ তাঁহাদের নিজেকে মনে করাইয়া দিবার জন্য পর কেহ উপস্থিত থাকে না। নিজের সহিত ব্যতীত আর কাহারো সহিত ইহারা ভাল করিয়া মেশেন না বলিয়া ইহারা নিজের কথা ভাবেন না। ইঁহারাই যথার্থ আত্মময় আত্ম-বিস্মৃত।