ওহে জীবনবল্লভ, ওহে সাধনদুর্লভ, আমি মর্মের কথা অন্তরব্যথা কিছুই নাহি কব-- শুধু জীবন মন চরণে দিনু বুঝিয়া লহো সব। আমি কী আর কব ॥ এই সংসারপথসঙ্কট অতি কণ্টকময় হে, আমি নীরবে যাব হৃদয়ে লয়ে প্রেমমুরতি তব। আমি কী আর কব ॥ সুখ দুখ সব তুচ্ছ করিনু প্রিয় অপ্রিয় হে-- তুমি নিজ হাতে যাহা সঁপিবে তাহা মাথায় তুলিয়া লব। আমি কী আর কব ॥ অপরাধ যদি ক'রে থাকি পদে, না করো যদি ক্ষমা, তবে পরানপ্রিয়, দিয়ো হে দিয়ো বেদনা নব নব। তবু ফেলো না দূরে, দিবসশেষে ডেকে নিয়ো চরণে-- তুমি ছাড়া আর কী আছে আমার মৃত্যু-আঁধার ভব। আমি কী আর কব ॥
তোমার বীণা আমার মনোমাঝে কখনো শুনি, কখনো ভুলি, কখনো শুনি না যে ॥ আকাশ যবে শিহরি উঠে গানে গোপন কথা কহিতে থাকে ধরার কানে কানে-- তাহার মাঝে সহসা মাতে বিষম কোলাহলে আমার মনে বাঁধনহারা স্বপন দলে দলে। হে বীণাপাণি, তোমার সভাতলে আকুল হিয়া উন্মাদিয়া বেসুর হয়ে বাজে ॥ তোমার বানী কখনো শুনি কখনো শুনি না যে॥ চলিতেছিনু তব কমলবনে, পথের মাঝে ভুলালো পথ উতলা সমীরণে। তোমার সুর ফাগুনরাতে জাগে, তোমার সুর অশোকশাখে অরুণরেণুরাগে। সে সুর বাহি চলিতে চাহি আপন-ভোলা মনে গুঞ্জরিত-ত্বরিত-পাখা মধুকরের সনে। কুহেলী কেন জড়ায় আবরণে-- আঁধারে আলো আবিল করে, আঁখি যে মরে লাজে, তোমার বানী কখনো শুনি কখনো শুনি না যে॥
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে। ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে লুটিয়ে যায় ধুলায় রে॥ ও যে আমায় ঘরের বাহির করে, পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে-- ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে যায় রে কোন্ চুলায় রে। ও যে কোন্ বাঁকে কী ধন দেখাবে, কোন্খানে কী দায় ঠেকাবে-- কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে ভেবেই না কুলায় রে॥