অয়ি বিষাদিনী বীণা, আয় সখী, গা লো সেই-সব পুরানো গান— বহুদিনকার লুকানো স্বপনে ভরিয়া দে-না লো আঁধার প্রাণ ।। হা রে হতবিধি, মনে পড়ে তোর সেই একদিন ছিল আমি আর্যলক্ষ্মী এই হিমালয়ে এই বিনোদিনী বীণা করে লয়ে যে গান গেয়েছি সে গান শুনিয়া জগত চমকি উঠিয়াছিল ।। আমি অর্জুনেরে— আমি যুধিষ্ঠিরে করিয়াছি স্তনদান । এই কোলে বসি বাল্মীকি করেছে পুণ্য রামায়ণ গান । আজ অভাগিনী— আজ অনাথিনী ভয়ে ভয়ে ভয়ে লুকায়ে লুকায়ে নীরবে নীরবে কাঁদি, পাছে জননীর রোদন শুনিয়া একটি সন্তান উঠে রে জাগিয়া ! কাঁদিতেও কেহ দেয় না বিধি ।। হায় রে বিধাতা, জানেনা তাহারা সে দিন গিয়াছে চলি যে দিন মুছিতে বিন্দু-অশ্রুধার কত-না করিত সন্তান আমার— কত-না শোণিত দিত রে ঢালি ।।
হেথা যে গান গাইতে আসা আমার হয় নি সে গান গাওয়া-- আজো কেবলি সুর সাধা, আমার কেবল গাইতে চাওয়া। আমার লাগে নাই সে সুর, আমার বাঁধে নাই সে কথা, শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে গানের ব্যাকুলতা। আজো ফোটে নাই সে ফুল, শুধু বহেছে এক হাওয়া। আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি শুনি নাই তার বাণী, কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার পায়ের ধ্বনিখানি। আমার দ্বারের সমুখ দিয়ে সে জন করে আসা-যাওয়া। শুধু আসন পাতা হল আমার সারাটি দিন ধ'র-- ঘরে হয় নি প্রদীপ জ্বালা, তারে ডাকব কেমন ক'রে। আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে হয় নি আমারা পাওয়া।