একলা ব'সে একে একে অন্যমনে পদ্মের দল ভাসাও জলে অকারণে। হায় রে, বুঝি কখন তুমি গেছ ভুলে ও যে আমি এনেছিলেম আপনি তুলে, রেখেছিলেম প্রভাতে ওই চরণমূলে অকারণে-- কখন তুলে নিলে হাতে যাবার ক্ষণে অন্যমনে॥ দিনের পরে দিনগুলি মোর এমনি ভাবে তোমার হাতে ছিঁড়ে হারিয়ে যাবে। সবগুলি এই শেষ হবে যেই তোমার খেলায় এমনি তোমার আলস-ভরা অবহেলায় হয়তো তখন বাজবে ব্যথা সন্ধেবেলায় অকারণে-- চোখের জলের লাগবে আভাস নয়নকোণে অন্যমনে॥
আমার আঁধার ভালো, আলোর কাছে বিকিয়ে দেবে আপনাকে সে ॥ আলোরে যে লোপ ক'রে খায় সেই কুয়াশা সর্বনেশে ॥ অবুঝ শিশু মায়ের ঘরে সহজ মনে বিহার করে, অভিমানী জ্ঞানী তোমার বাহির দ্বারে ঠেকে এসে ॥ তোমার পথ আপনায় আপনি দেখায়, তাই বেয়ে, মা, চলব সোজা। যারা পথ দেখাবার ভিড় করে গো তারা কেবল বাড়ায় খোঁজা-- ওরা ডাকে আমায় পূজার ছলে, এসে দেখি দেউল-তলে-- আপন মনের বিকারটারে সাজিয়ে রাখে ছদ্মবেশে ॥
ওগো আমার চির-অচেনা পরদেশী, ক্ষণতরে এসেছিলে নির্জন নিকুঞ্জ হতে কিসের আহ্বানে॥ যে কথা বলেছিলে ভাষা বুঝি নাই তার, আভাস তারি হৃদয়ে বাজিছে সদা যেন কাহার বাঁশির মনোমোহন সুরে॥ প্রভাতে একা বসে গেঁথেছিনু মালা, ছিল পড়ে তৃণতলে অশোকবনে। দিনশেষে ফিরে এসে পাই নি তারে, তুমিও কোথা গেছ চলে-- বেলা গেল, হল না আর দেখা ॥