এসো এসো এই বুকে নিবাসে তোমার, যূথভ্রষ্ট বাণবিদ্ধ হরিণী আমার, এইখানে বিরাজিছে সেই চির হাসি, আঁধারিতে পারিবে না তাহা মেঘরাশি। এই হস্ত এ হৃদয় চিরকাল মতো তোমার, তোমারি কাজে রহিবে গো রত! কিসের সে চিরস্থায়ী ভালোবাসা তবে, গৌরবে কলঙ্কে যাহা সমান না রবে? জানি না, জানিতে আমি চাহি না, চাহি না, ও হৃদয়ে এক তিল দোষ আছে কিনা, ভালোবাসি তোমারেই এই শুধু জানি, তাই হলে হল, আর কিছু নাহি মানি। দেবতা সুখের দিনে বলেছ আমায়, বিপদে দেবতা সম রক্ষিব তোমায়, অগ্নিময় পথ দিয়া যাব তব সাথে, রক্ষিব, মরিব কিংবা তোমারি পশ্চাতে।
এ ঘরে ফুরালো খেলা, এল দ্বার রুধিবার বেলা। বিলয়বিলীন দিনশেষে ফিরিয়া দাঁড়াও এসে যে ছিলে গোপনচর জীবনের অন্তরতর। ক্ষণিক মুহূর্ততরে চরম আলোকে দেখে নিই স্বপ্নভাঙা চোখে; চিনে নিই, এ লীলার শেষ পরিচয়ে কী তুমি ফেলিয়া গেলে, কী রাখিলে অন্তিম সঞ্চয়ে। কাছের দেখায় দেখা পূর্ণ হয় নাই, মনে-মনে ভাবি তাই-- বিচ্ছেদের দূরদিগন্তের ভূমিকায় পরিপূর্ণ দেখা দিবে অস্তরবিরশ্মির রেখায়। জানি না, বুঝিব কিনা প্রলয়ের সীমায় সীমায় শুভ্রে আর কালিমায় কেন এই আসা আর যাওয়া, কেন হারাবার লাগি এতখানি পাওয়া। জানি না, এ আজিকার মুছে-ফেলা ছবি আবার নূতন রঙে আঁকিবে কি তুমি, শিল্পীকবি।
আমার খোকা করে গো যদি মনে এখনি উড়ে পারে সে যেতে পারিজাতের বনে। যায় না সে কি সাধে। মায়ের বুকে মাথাটি থুয়ে সে ভালোবাসে থাকিতে শুয়ে, মায়ের মুখ না দেখে যদি পরান তার কাঁদে। আমার খোকা সকল কথা জানে। কিন্তু তার এমন ভাষা, কে বোঝে তার মানে। মৌন থাকে সাধে? মায়ের মুখে মায়ের কথা শিখিতে তার কী আকুলতা, তাকায় তাই বোবার মতো মায়ের মুখচাঁদে। খোকার ছিল রতনমণি কত-- তবু সে এল কোলের 'পরে ভিখারীটির মতো। এমন দশা সাধে? দীনের মতো করিয়া ভান কাড়িতে চাহে মায়ের প্রাণ, তাই সে এল বসনহীন সন্ন্যাসীর ছাঁদে। খোকা যে ছিল বাঁধন-বাধা-হারা -- যেখানে জাগে নূতন চাঁদ ঘুমায় শুকতারা। ধরা সে দিল সাধে? অমিয়মাখা কোমল বুকে হারাতে চাহে অসীম সুখে, মুকতি চেয়ে বাঁধন মিঠা মায়ের মায়া-ফাঁদে। আমার খোকা কাঁদিতে জানিত না, হাসির দেশে করিত শুধু সুখের আলোচনা। কাঁদিতে চাহে সাধে? মধুমুখের হাসিটি দিয়া টানে সে বটে মায়ের হিয়া, কান্না দিয়ে ব্যথার ফাঁসে দ্বিগুণ বলে বাঁধে।