পূর্ণ করি নারী তার জীবনের থালি প্রিয়ের চরণে প্রেম নিঃশেষিয়া দিতে গেল ঢালি, ব্যর্থ হল পথ-খোঁজা-- কহিল, "হে ভগবান, নিষ্ঠুর যে এ অর্ঘ্যের বোঝা; আমার দিবস রাত্রি অসহ্য পেষণে একান্ত পীড়িত আর্ত; তাই সান্ত্বনার অন্বেষণে এসেছি তোমার দ্বারে--এ প্রেম তুমিই লও প্রভু!' "লও লও' বারবার ডেকে বলে, তবু দিতে পারে না যে তাকে কৃপণের ধন-সম শিরা আঁকড়িয়া থাকে। যেমন তুষাররাশি গিরিশিরে লগ্ন রহে, কিছুতে স্রোত না বহে, আপন নিষ্ফল কঠিনতা দেয় তারে ব্যথা, তেমনি সে নারী নিশ্চল-হৃদয়ভারে-ভারী কেঁদে বলে, "কী ধনে আমার প্রেম দামি সে যদি না বুঝেছিল, তুমি অন্তর্যামী, তুমিও কি এরে চিনিবে না? মানবজন্মের সব দেনা শোধ করি লও, প্রভু, আমার সর্বস্ব রত্ন নিয়ে। তুমি যে প্রেমের লোভী মিথ্যা কথা কি এ!' "লও লও' যত বলে খোলে না যে তার হৃদয়ের দ্বার। সারাদিন মন্দিরা বাজায়ে করে গান, "লও তুমি লও ভগবান!'
কোলে ছিল সুরে-বাঁধা বীণা মনে ছিল বিচিত্র রাগিণী, মাঝখানে ছিঁড়ে যাবে তার সে কথা ভাবি নি। ওগো আজি প্রদীপ নিবাও, বন্ধ করো দ্বার-- সভা ভেঙে ফিরে চলে যাও হৃদয় আমার। তোমরা যা আশা করেছিলে নারিনু পুরাতে-- কে জানিত ছিঁড়ে যাবে তার গীত না ফুরাতে। ভেবেছিনু ঢেলে দিব মন, প্লাবন করিব দশদিশি-- পুষ্পগন্ধে আনন্দে মিশিয়া পূর্ণ হবে পূর্ণিমার নিশি। ভেবেছিনু ঘিরিয়া বসিবে তোমরা সকলে, গীতশেষে হেসে ভালোবেসে মালা দিবে গলে, শেষ করে যাব সব কথা সকল কাহিনী-- মাঝখানে ছিঁড়ে যাবে তার সে কথা ভাবি নি। আজি হতে সবে দয়া করে ভুলে যাও, ঘরে যাও চলে-- করিয়ো না মোরে অপরাধী মাঝখানে থামিলাম ব'লে। আমি চাহি আজি রজনীতে নীরব নির্জন ভূমিতলে ঘুমায়ে পড়িতে স্তব্ধ অচেতন-- খ্যাতিহীন শান্তি চাহি আমি স্নিগ্ধ অন্ধকার। সাঙ্গ না হইতে সব গান ছিন্ন হল তার।