খ্যাতি নিন্দা পার হয়ে জীবনের এসেছি প্রদোষে, বিদায়ের ঘাটে আছি বসে। আপনার দেহটারে অসংশয়ে করেছি বিশ্বাস, জরার সুযোগ পেয়ে নিজেরে সে করে পরিহাস, সকল কাজেই দেখি কেবলি ঘটায় বিপর্যয়, আমার কর্তৃত্ব করে ক্ষয়; সেই অপমান হতে বাঁচাতে যাহারা অবিশ্রাম দিতেছে পাহারা, পাশে যারা দাঁড়ায়েছে দিনান্তের শেষ আয়োজনে, নাম না'ই বলিলাম তাহারা রহিল মনে মনে। তাহারা দিয়েছে মোরে সৌভাগ্যের শেষ পরিচয়, ভুলায়ে রাখিছে তারা দুর্বল প্রাণের পরাজয়; এ কথা স্বীকার তারা করে খ্যাতি প্রতিপত্তি যত সুযোগ্য সক্ষমদের তরে; তাহারাই করিছে প্রমাণ অক্ষমের ভাগ্যে আছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সেই দান। সমস্ত জীবন ধরে খ্যাতির খাজনা দিতে হয়, কিছু সে সহে না অপচয়; সব মূল্য ফুরাইলে যে দৈন্য প্রেমের অর্ঘ্য আনে অসীমের স্বাক্ষর সেখানে।
ওগো মোর না-পাওয়া গো, ভোরের অরুণ-আভাসনে ঘুমে ছুঁয়ে যাও মোর পাওয়ার পাখিরে ক্ষণে ক্ষণে। সহসা স্বপন টুটে তাই সে যে গেয়ে উঠে কিছু তার বুঝি নাহি বুঝি। তাই সে যে পাখা মেলে উড়ে যায় ঘর ফেলে, ফিরে আসে কারে খুঁজি খুঁজি। ওগো মোর না-পাওয়া গো, সায়াহ্নের করুণ কিরণে পূরবীতে ডাক দাও আমার পাওয়ারে ক্ষণে ক্ষণে। হিয়া তাই ওঠে কেঁদে, রাখিতে পারি না বেঁধে, অকারণে দূরে থাকে চেয়ে-- মলিন আকাশতলে যেন কোন্ খেয়া চলে, কে যে যায় সারিগান গেয়ে। ওগো মোর না-পাওয়া গো, বসন্তনিশীথসমীরণে অভিসারে আসিতেছ আমার পাওয়ার কুঞ্জবনে। কে জানালো সে কথা যে গোপন হৃদয়মাঝে আজও তাহা বুঝিতে পারি নি। মনে হল পলে পলে দূর পথে বেজে চলে ঝিল্লিরবে তাহার কিঙ্কিণী। ওগো মোর না-পাওয়া গো, কখন আসিয়া সংগোপনে আমার পাওয়ার বীণা কাঁপাও অঙ্গুলিপরশনে। কার গানে কার সুর মিলে গেছে সুমধুর ভাগ করে কে লইবে চিনে। ওরা এসে বলে, "এ কী, বুঝাইয়া বলো দেখি।' আমি বলি বুঝাতে পারি নে। ওগো মোর না-পাওয়া গো, শ্রাবণের অশান্ত পবনে কদম্ববনের গন্ধে জড়িত বৃষ্টির বরিষনে আমার পাওয়ার কানে জানি নে তো মোর গানে কার কথা বলি আমি কারে। "কী কহ' সে যবে পুছে তখন সন্দেহ ঘুচে-- আমার বন্দনা না-পাওয়ারে।