হায় রে তোরে রাখব ধরে, ভালোবাসা, মনে ছিল এই দুরাশা। পাথর দিয়ে ভিত্তি ফেঁদে বাসা যে তোর দিলেম বেঁধে, এল তুফান সর্বনাশা। মনে আমার ছিল যে রে ঘিরব তোরে হাসির ঘেরে-- চোখের জলে হল ভাসা। অনেক দুঃখে গেছে বোঝা বেঁধে রাখা নয় তো সোজা, সুখের ভিতে নহে তোমার অচল বাসা। এবার আমি সব-ফুরানো পথের শেষে বাঁধব বাসা মেঘের দেশে। ক্ষণে ক্ষণে নিত্যনব বদল কোরো মূর্তি তব রঙ-ফেরানো মায়ার বেশে। কখনো বা জ্যোৎস্না-ভরা কখনো বা বাদল-ঝরা খেয়াল তোমার কেঁদে হেসে। যেই হাওয়াতে হেলাভরে মিলিয়ে যাবে দিগন্তরে সেই হাওয়াতেই ফিরে ফিরে আসবে ভেসে। কঠিন মাটি বানের জলে যায় যে বয়ে, শৈলপাষাণ যায় তো ক্ষ'য়ে। কালের ঘায়ে সেই তো মরে অটল বলের গর্বভরে থাকতে যে চায় অচল হয়ে। জানে যারা চলার ধারা নিত্য থাকে নূতন তারা, হারায় যারা রয়ে রয়ে। ভালোবাসা, তোমারে তাই মরণ দিয়ে বরিতে চাই, চঞ্চলতার লীলা তোমার রইব সয়ে।
মুখ ফিরায়ে রব তোমার পানে এই ইচ্ছাটি সফল করো প্রাণে। কেবল থাকা, কেবল চেয়ে থাকা, কেবল আমার মনটি তুলে রাখা, সকল ব্যথা সকল আকাঙক্ষায় সকল দিনের কাজেরি মাঝখানে। নানা ইচ্ছা ধায় নানা দিক পানে, একটি ইচ্ছা সফল করো প্রাণে। সেই ইচ্ছাটি রাতের পরে রাতে জাগে যেন একের বেদনাতে, দিনের পরে দিনকে যেন গাঁথে একের সূত্রে এক আনন্দগানে।
সেই পুরাতন কালে ইতিহাস যবে সংবাদে ছিল না মুখরিত নিস্তব্ধ খ্যাতির যুগে-- আজিকার এইমতো প্রাণযাত্রাকল্লোলিত প্রাতে যাঁরা যাত্রা করেছেন মরণশঙ্কিল পথে আত্মার অমৃত-অন্ন করিবারে দান দূরবাসী অনাত্মীয় জনে, দলে দলে যাঁরা উত্তীর্ণ হন নি লক্ষ্য, তৃষানিদারুণ মরুবালুতলে অস্থি গিয়েছেন রেখে, সমুদ্র যাঁদের চিহ্ন দিয়েছে মুছিয়া, অনারদ্ধ কর্মপথে অকৃতার্থ হন নাই তাঁরা-- মিশিয়া আছেন সেই দেহাতীত মহাপ্রাণ-মাঝে শক্তি জোগাইছে যাহা অগোচরে চিরমানবেরে-- তাঁহাদের করুণার স্পর্শ লভিতেছি আজি এই প্রভাত-আলোকে, তাঁহাদের করি নমস্কার।