যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক্, তারা তো পাবে না জানিতে তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ আমার হৃদয়খানিতে। যারা কথা বলে তাহারা বলুক, আমি কাহারেও করি না বিমুখ-- তারা নাহি জানে ভরা আছে প্রাণ তব অকথিত বাণীতে। নীরবে নিয়ত রয়েছ আমার নীরব হৃদয়খানিতে। তোমার লাগিয়া কারেও, হে প্রভু, পথ ছেড়ে দিতে বলিব না কভু-- যত প্রেম আছে সব প্রেম মোরে তোমা-পানে রবে টানিতে। সকলের প্রেমে রবে তব প্রেম আমার হৃদয়খানিতে। সবার সহিতে তোমার বাঁধন, হেরি যেন সদা এ মোর সাধন, সবার সঙ্গ পারে যেন মনে তব আরাধনা আনিতে। সবার মিলনে তোমার মিলন জাগিবে হৃদয়খানিতে।
মধু মাঝির ওই যে নৌকোখানা বাঁধা আছে রাজগঞ্জের ঘাটে, কারো কোনো কাজে লাগছে না তো, বোঝাই করা আছে কেবল পাটে। আমায় যদি দেয় তারা নৌকাটি আমি তবে একশোটা দাঁড় আঁটি, পাল তুলে দিই চারটে পাঁচটা ছটা -- মিথ্যে ঘুরে বেড়াই নাকো হাটে। আমি কেবল যাই একটিবার সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার। তখন তুমি কেঁদো না মা, যেন বসে বসে একলা ঘরের কোণে -- আমি তো মা, যাচ্ছি নেকো চলে রামের মতো চোদ্দ বছর বনে। আমি যাব রাজপুত্রু হয়ে নৌকো-ভরা সোনামানিক বয়ে, আশুকে আর শ্যামকে নেব সাথে, আমরা শুধু যাব মা তিন জনে। আমি কেবল যাব একটিবার সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার। ভোরের বেলা দেব নৌকো ছেড়ে, দেখতে দেখতে কোথায় যাব ভেসে। দুপুরবেলা তুমি পুকুর-ঘাটে, আমরা তখন নতুন রাজার দেশে। পেরিয়ে যাব তির্পুর্নির ঘাট, পেরিয়ে যাব তেপান্তরের মাঠ, ফিরে আসতে সন্ধে হয়ে যাবে, গল্প বলব তোমার কোলে এসে। আমি কেবল যাব একটিবার সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।