আপন মনে যে কামনার চলেছি পিছু পিছু নহে সে বেশি কিছু। মরুভূমিতে করেছি আনাগোনা-- তৃষিত হিয়া চেয়েছে যাহা নহে সে হীরা সোনা, পর্ণপুটে একটু শুধু জল, উৎসতটে খেজুরবনে ক্ষণিক ছায়াতল। সেইটুকুতে বিরোধ ঘোচে জীবন মরণের, বিরাম জোটে শ্রান্ত চরণের। হাটের হাওয়া ধুলায় ভরপুর, তাহার কোলাহলের তলে একটুখানি সুর সকল হতে দুর্লভ তা, তবু সে নহে বেশি; বৈশাখের তাপের শেষাশেষি আকাশ-চাওয়া শুষ্কমাটি-'পরে হঠাৎ-ভেসে-আসা মেঘের ক্ষণকালের তরে এক পশলা বৃষ্টিবরিষন, দুঃস্বপন বক্ষে যবে শ্বাস নিরোধ করে জাগিয়ে-দেওয়া করুণ পরশন; এইটুকুরই অভাব গুরুভার, না জেনে তবু ইহারই লাগি হৃদয়ে হাহাকার। অনেক দুরাশারে সাধনা করে পেয়েছি তবু ফেলিয়া গেছি তারে। যে পাওয়া শুধু রক্তে নাচে, স্বপ্নে যাহা গাঁথা, ছন্দে যার হল আসন পাতা, খ্যাতিস্মৃতির পাষাণপটে রাখে না যাহা রেখা, ফাল্গুনের সাঁঝতারায় কাহিনী যার লেখা, সে ভাষা মোর বাঁশিই শুধু জানে-- এই যা দান গিয়েছে মিশে গভীরতর প্রাণে, করি নি যার আশা, যাহার লাগি বাঁধি নি কোনো বাসা, বাহিরে যার নাইকো ভার, যায় না দেখা যারে, বেদনা তারই ব্যাপিয়া মোর নিখিল আপনারে।
যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে; যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড় পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার। সর্বজন সর্বক্ষণ চলে যেই পথে তৃণগুল্ম সেথা নাহি জন্মে কোনোমতে; যে জাতি চলে না কভু তারি পথ-'পরে তন্ত্র-মন্ত্র-সংহিতায় চরণ না সরে।