ঝাঁকড়া চুলের মেয়ের কথা কাউকে বলি নি, কোন্ দেশে যে চলে গেছে সে-চঞ্চলিনী। সঙ্গী ছিল কুকুর কালু, বেশ ছিল তার আলুথালু, আপনা-'পরে অনাদরে ধুলায় মলিনী। হুটোপাটি ঝগড়াঝাঁটি ছিল নিষ্কারণেই দিঘির জলে গাছের ডালে গতি ক্ষণে-ক্ষণেই। পাগলামি তার কানায় কানায়, খেয়াল দিয়ে খেলা বানায়, উচ্চহাসে কলভাষে কলকলিনী। দেখা হলে যখন-তখন বিনা অপরাধে মুখভঙ্গী করত আমায় অপমানের ছাঁদে। শাসন করতে যেমন ছুটি হঠাৎ দেখি ধুলায় লুটি' কাজল আঁখি চোখের জলে ছলছলিনী। আমার সঙ্গে পঞ্চাশবার জন্মশোধের আড়ি কথায় কথায় নিত্যকালের মতন ছাড়াছাড়ি। ডাকলে তারে "পুঁটলি' ব'লে সাড়া দিত মর্জি হলে, ঝগড়াদিনের নাম ছিল তার স্বর্ণনলিনী।
গোধূলিতে নামল আঁধার, ফুরিয়ে গেল বেলা, ঘরের মাঝে সাঙ্গ হল চেনা মুখের মেলা। দূরে তাকায় লক্ষ্যহারা নয়ন ছলোছলো, এবার তবে ঘরের প্রদীপ বাইরে নিয়ে চলো। মিলনরাতে সাক্ষী ছিল যারা আজো জ্বলে আকাশে সেই তারা। পাণ্ডু-আঁধার বিদায়রাতের শেষে যে তাকাত শিশিরসজল শূন্যতা-উদ্দেশে সেই তারকাই তেমনি চেয়েই আছে অস্তলোকের প্রান্তদ্বারের কাছে। অকারণে তাই এ প্রদীপ জ্বালাই আকাশ-পানে-- যেখান হতে স্বপ্ন নামে প্রাণে।