যখন যেমন মনে করি তাই হতে পাই যদি আমি তবে একখানি হই ইচ্ছামতী নদী। রৈবে আমার দখিন ধারে সূর্য ওঠার পার, বাঁয়ের ধারে সন্ধ্যেবেলায় নামবে অন্ধকার। আমি কইব মনের কথা দুই পারেরি সাথে, আধেক কথা দিনের বেলায়, আধেক কথা রাতে। যখন ঘুরে ঘুরে বেড়াই আপন গাঁয়ের ঘাটে ঠিক তখনি গান গেয়ে যাই দূরের মাঠে মাঠে গাঁয়ের মানুষ চিনি, যারা নাইতে আসে জলে, গোরু মহিষ নিয়ে যারা সাঁতরে ওপার চলে। দূরের মানুষ যারা তাঁদের নতুনতরো বেশ, নাম জানি নে, গ্রাম জানি নে অদ্ভুতের একশেষ। জলের উপর ঝলোমলো টুকরো আলোর রাশি। ঢেউয়ে ঢেউয়ে পরীর নাচন, হাততালি আর হাসি। নিচের তলায় তলিয়ে যেথায় গেছে ঘাটের ধাপ সেইখানেতে কারা সবাই রয়েছে চুপচাপ। কোণে কোণে আপন মনে করছে তারা কী কে। আমারি ভয় করবে কেমন তাকাতে সেই দিকে। গাঁয়ের লোকে চিনবে আমার কেবল একটুখানি। বাকি কোথায় হারিয়ে যাবে আমিই সে কি জানি? একধারেতে মাঠে ঘাটে সবুজ বরন শুধু, আর একধারে বালুর চরে রৌদ্র করে ধু ধু। দিনের বেলায় যাওয়া আসা, রাত্তিরে থম থম! ডাঙার পানে চেয়ে চেয়ে করবে গা ছম ছম।
হেথায় তাহারে পাই কাছে-- যত কাছে ধরাতল, যত কাছে ফুলফল-- যত কাছে বায়ু জল আছে। যেমন পাখির গান, যেমন জলের তান, যেমনি এ প্রভাতের আলো, যেমনি এ কোমলতা, অরণ্যের শ্যামলতা, তেমনি তাহারে বাসি ভালো। যেমন সুন্দর সন্ধ্যা, যেমন রজনীগন্ধা, শুকতারা আকাশের ধারে, যেমন সে অকলুষা শিশিরনির্মলা উষা, তেমনি সুন্দর হেরি তারে। যেমন বৃষ্টির জল, যেমন আকাশতল, সুখসুপ্তি যেমন নিশার, যেমন তটিনীনীর, বটচ্ছায়া অটবীর, তেমনি সে মোর আপনার। যেমন নয়ন ভরি অশ্রুজল পড়ে ঝরি তেমনি সহজ মোর গীতি-- যেমন রয়েছে প্রাণ ব্যাপ্ত করি মর্মস্থান তেমনি রয়েছে তার প্রীতি।