বৈকালবেলা ফসল-ফুরানো শূন্য খেতে বৈশাখে যবে কৃপণ ধরণী রয়েছে তেতে, ছেড়ে তার বন জানি নে কখন কী ভুল ভুলি শুষ্ক ধূলির ধূসর দৈন্যে এসেছিল বুল্বুলি। সকালবেলার স্মৃতিখানি মনে বহিয়া বুঝি তরুণ দিনের ভরা আতিথ্য বেড়ালো খুঁজি। অরুণে শ্যামলে উজ্জ্বল সেই পূর্ণতারে মিথ্যা ভাবিয়া ফিরে যাবে সে কি রাতের অন্ধকারে। তবুও তো গান করে গেল দান কিছু না পেয়ে। সংশয়-মাঝে কী শুনায়ে গেল কাহারে চেয়ে। যাহা গেছে সরে কোনো রূপ ধ'রে রয়েছে বাকি, এই সংবাদ বুঝি মনে মনে জানিতে পেরেছে পাখি। প্রভাতবেলার যে ঐশ্বর্য রাখে নি কণা, এসেছিল সে যে, হারায় না কভু সে সান্ত্বনা। সত্য যা পাই ক্ষণেকের তরে ক্ষণিক নহে। সকালের পাখি বিকালের গানে এ আনন্দই বহে।
দিনের আলো নামে যখন ছায়ার অতলে আমি আসি ঘট ভরিবার ছলে একলা দিঘির জলে। তাকিয়ে থাকি,দেখি সঙ্গীহারা একটি সন্ধ্যাতারা ফেলেছে তার ছায়াটি এই কমলসাগরে। ডোবে না সে, নেবে না সে, ঢেউ দিলে সে যায় না তবু স'রে-- যেন আমার বিফল রাতের চেয়ে থাকার স্মৃতি কালের কালো পটের 'পরে রইল আঁকা নিতি। মোর জীবনের ব্যর্থ দীপের অগ্নিরেখার বাণী ঐ যে ছায়াখানি।
হে সকল ঈশ্বরের পরম ঈশ্বর, তপোবনতরুচ্ছায়ে মেঘমন্দ্রস্বর ঘোষণা করিয়াছিল সবার উপরে অগ্নিতে, জলেতে, এই বিশ্বচরাচরে, বনস্পতি ওষধিতে এক দেবতার অখন্ড অক্ষয় ঐক্য। সে বাক্য উদার এই ভারতেরি। যাঁরা সবল স্বাধীন নির্ভয় সরলপ্রাণ, বন্ধনবিহীন সদর্পে ফিরিয়াছেন বীর্যজ্যোতিষ্মান লঙ্ঘিয়া অরণ্য নদী পর্বত পাষাণ তাঁরা এক মহান বিপুল সত্য-পথে তোমারে লভিয়াছেন নিখিল জগতে। কোনোখানে না মানিয়া আত্মার নিষেধ সবলে সমস্ত বিশ্ব করেছেন ভেদ।