আমি বিকাব না কিছুতে আর আপনারে। আমি দাঁড়াতে চাই সভার তলে সবার সাথে এক সারে। সকালবেলার আলোর মাঝে মলিন যেন না হই লাজে, আলো যেন পশিতে পায় মনের মধ্যে একবারে। বিকাব না, বিকাব না আপনারে। আমি বিশ্ব-সাথে রব সহজ বিশ্বাসে। আমি আকাশ হতে বাতাস নেব প্রাণের মধ্যে নিশ্বাসে। পেয়ে ধরার মাটির স্নেহ পুণ্য হবে সর্ব দেহ, গাছের শাখা উঠবে দুলে আমার মনের উল্লাসে। বিশ্বে রব সহজ সুখে বিশ্বাসে। আমি সবায় দেখে খুশি হব অন্তরে। কিছু বেসুর যেন বাজে না আর আমার বীণা-যন্তরে। যাহাই আছে নয়ন ভরি সবই যেন গ্রহণ করি, চিত্তে নামে আকাশ-গলা আনন্দিত মন্ত্র রে। সবায় দেখে তৃপ্ত রব অন্তরে।
কেউ চেনা নয় সব মানুষই অজানা। চলেছে আপনার রহস্যে আপনি একাকী। সেখানে তার দোসর নেই। সংসারের ছাপমারা কাঠামোয় মানুষের সীমা দিই বানিয়ে। সংজ্ঞার বেড়া-দেওয়া বসতির মধ্যে বাঁধা মাইনের কাজ করে সে। থাকে সাধারণের চিহ্ন নিয়ে ললাটে। এমন সময় কোথা থেকে ভালোবাসার বসন্ত-হাওয়া লাগে, সীমার আড়ালটা যায় উড়ে, বেরিয়ে পড়ে চির-অচেনা। সামনে তাকে দেখি স্বয়ংস্বতন্ত্র, অপূর্ব, অসাধারণ, তার জুড়ি কেউ নেই। তার সঙ্গে যোগ দেবার বেলায় বাঁধতে হয় গানের সেতু, ফুলের ভাষায় করি তার অভ্যর্থনা। চোখ বলে, যা দেখলুম, তুমি আছ তাকে পেরিয়ে। মন বলে চোখে-দেখা কানে-শোনার ওপারে যে রহস্য তুমি এসেছ সেই অগমের দূত,-- রাত্রি যেমন আসে পৃথিবীর সামনে নক্ষত্রলোক অবারিত ক'রে। তখন হঠাৎ দেখি আমার মধ্যেকার অচেনাকে, তখন আপন অনুভবের তল খুঁজে পাইনে, সেই অনুভব "তিলে তিলে নূতন হোয়।"