সৃষ্টির চলেছে খেলা চারি দিক হতে শত ধারে কালের অসীম শূন্য পূর্ণ করিবারে। সম্মুখে যা কিছু ঢালে পিছনে তলায় বারে বারে; নিরন্তর লাভ আর ক্ষতি, তাহাতেই দেয় তারে গতি। কবির ছন্দের খেলা সেও থাকি থাকি নিশ্চিহ্ন কালের গায়ে ছবি আঁকা-আঁকি। কাল যায়, শূন্য থাকে বাকি। এই আঁকা-মোছা নিয়ে কাব্যের সচল মরীচিকা ছেড়ে দেয় স্থান, পরিবর্তমান জীবনযাত্রার করে চলমান টীকা। মানুষ আপন-আঁকা কালের সীমায় সান্ত্বনা রচনা করে অসীমের মিথ্যা মহিমায়, ভুলে যায় কত-না যুগের বাণীরূপ ভূমিগর্ভে বহিতেছে নিঃশব্দের নিষ্ঠুর বিদ্রূপ।
এ কি তবে সবই সত্য হে আমার চিরভক্ত? আমার চোখের বিজুলি-উজল আলোকে হৃদয়ে তোমার ঝঞ্ঝার মেঘ ঝলকে, এ কি সত্য? আমার মধুর অধর, বধূর নবলাজসম রক্ত, হে আমার চিরভক্ত, এ কি সত্য? চিরমন্দার ফুটেছে আমার মাঝে কি? চরণে আমার বীণাঝংকার বাজে কি? এ কি সত্য? নিশির শিশির ঝরে কি আমারে হেরিয়া? প্রভাত-আলোকে পুলক আমারে ঘেরিয়া, এ কি সত্য? তপ্তকপোলপরশে অধীর সমীর মদিরমত্ত, হে আমার চিরভক্ত, এ কি সত্য? কালো কেশপাশে দিবস লুকায়ে আঁধারে, মরণবাঁধন মোর দুই ভুজে বাঁধা রে, এ কি সত্য? ভুবন মিলায়ে মোর অঞ্চলখানিতে, বিশ্ব নীরব মোর কণ্ঠের বাণীতে, এ কি সত্য? ত্রিভুবন লয়ে শুধু আমি আছি, আছে মোর অনুরক্ত, হে আমার চিরভক্ত, এ কি সত্য? তোমার প্রণয় যুগে যুগে মোর লাগিয়া জগতে জগতে ফিরিতেছিল কি জাগিয়া? এ কি সত্য? আমার বচনে নয়নে অধরে অলকে চিরজনমের বিরাম লভিলে পলকে, এ কি সত্য? মোর সুকুমার ললাটফলকে লেখা অসীমের তত্ত্ব, হে আমার চিরভক্ত, এ কি সত্য?