তোমায় ছেড়ে দূরে চলার নানা ছলে তোমার মাঝে পড়ি এসে দ্বিগুণ বলে। নানান পথে আনাগোনা মিলনেরই জাল সে বোনা, যতই চলি ধরা পড়ি পলে পলে। শুধু যখন আপন কোণে পড়ে থাকি তখনি সেই স্বপন-ঘোরে কেবল ফাঁকি। বিশ্ব তখন কয় না বাণী, মুখেতে দেয় বসন টানি, আপন ছায়া দেখি, আপন নয়ন-জলে।
আমি ভালোবাসি, দেব, এই বাঙালার দিগন্তপ্রসার ক্ষেত্রে যে শান্তি উদার বিরাজ করিছে নিত্য, মুক্ত নীলাম্বরে অচ্ছায় আলোকে গাহে বৈরাগ্যের স্বরে যে ভৈরবীগান, যে মাধুরী একাকিনী নদীর নির্জন তটে বাজায় কিঙ্কিণী তরল কল্লোলরোলে, যে সরল স্নেহ তরুচ্ছায়া-সাথে মিশি স্নিগ্ধপল্লীগেহ অঞ্চলে আবরি আছে, যে মোর ভবন আকাশে বাতাসে আর আলোকে মগন সন্তোষে কল্যাণে প্রেমে-- করো আশীর্বাদ, যখনি তোমার দূত আনিবে সংবাদ তখনি তোমার কার্যে আনন্দিতমনে সব ছাড়ি যেতে পারি দুঃখে ও মরণে।
শ্লথপ্রাণ দুর্বলের স্পর্ধা আমি কভু সহিব না। লোলুপ সে লালায়িত, প্রেমেরে সে করে বিড়ম্বনা ক্লেদঘন চাটুবাক্যে, বাষ্পে বিজড়িত দৃষ্টি তার কলুষকুণ্ঠিত অঙ্গে লিপ্ত করে গ্লানি লালসার, আবেশে মন্থর কণ্ঠে গদ্গদ সে প্রার্থনা জানায় আলোকবঞ্চিত তার অন্তরের কানায় কানায় দুষ্ট ফেন উঠে বুদ্বুদিয়া-- ফেটে যায়, দেয় খুলি রুদ্ধ বিষবায়ু। গলিত মাংসের যেন ক্রিমিগুলি কল্পনাবিকার তার শিথিল চিন্তার তলে তলে আকুলিতে থাকে কিলিবিলি।-- যেন প্রাণপণ বলে মন তারে করে কষাঘাত! জীর্ণমজ্জা কাপুরুষে নারী যদি গ্রাহ্য করে, লজ্জিত দেবতা তারে দুষে অসহ্য সে অপমানে। নারী সে-যে মহেন্দ্রের দান, এসেছে ধরিত্রীতলে পুরুষেরে সঁপিতে সম্মান।