এই আমি একমনে সঁপিলাম তাঁরে-- তোমরা তাঁহারি ধন আলোকে আঁধারে। যখনি আমারি ব'লে ভাবি তোমাদের মিথ্যা দিয়ে জাল বুনি ভাবনা-ফাঁদের। সারথি চালান যিনি জীবনের রথ তিনিই জানেন শুধু কার কোথা পথ। আমি ভাবি আমি বুঝি পথের প্রহরী, পথ দেখাইতে গিয়ে পথ রোধ করি। আমার প্রদীপখানি অতি ক্ষীণকায়া,-- যতটুকু আলো দেয় তার বেশি ছায়া। এ প্রদীপ আজ আমি ভেঙে দিনু ফেলে, তাঁর আলো তোমাদের নিক বাহু মেলে। সুখী হও দুঃখী হও তাহে চিন্তা নাই; তোমরা তাঁহারি হও, আশীর্বাদ তাই।
বিজন রাতে যদি রে তোর সাহস থাকে দিনশেষের দোসর যে জন মিলবে তাকে। ঘনায় যবে আঁধার ছেয়ে অভয় মনে থাকিস চেয়ে-- আসবে দ্বারে আলোর দূতী নীরব ডাকে। যখন ঘরে আসনখানি শূন্য হবে দূরের পথে পায়ের ধ্বনি শুনবি তবে। কাটল প্রহর যাদের আশায় তারা যখন ফিরবে বাসায়, সাহানাগান বাজবে তখন ভিড়ের ফাঁকে।
অনেক চাওয়া ফিরলি চেয়ে আশায় ভুলি, আজ যদি তোর শূন্য হল ভিক্ষা-ঝুলি চমক তবে লাগুক তোরে, অধরা ধন দিক সে ভরে গোপন বঁধু, দেখতে কভু পাস নি যাকে। অভিসারের পথ বেড়ে যায় চলিস যত-- পথের মাঝে মায়ার ছায়া অনেক-মতো। বসবি যবে ক্লান্তিভরে আঁচল পেতে ধুলার 'পরে, হঠাৎ পাশে আসবে সে যে পথের বাঁকে। এবার তবে করিস সারা কাঙাল-পনা-- সমস্তদিন কাণাকড়ির হিসাব-গণা। শান্ত হলে মিলবে চাবি, অন্তরেতে দেখতে পাবি সবার শেষে তার পরে যে অশেষ থাকে। দূর বাঁশিতে যে সুর বাজে তাহার সাথে মিলিয়ে নিয়ে বাজাস বাঁশি বিদায়-রাতে। সহজ মনে যাত্রাশেষে যাস রে চলে সহজ হেসে, দিস নে ধরা অবসাদের জটিল পাকে।