কোথা হতে আসিয়াছি নাহি পড়ে মনে অগণ্য যাত্রীর সাথে তীর্থদরশনে এই বসুন্ধরাতলে; লাগিয়াছে তরী নীলাকাশ সমুদ্রের ঘাটের উপরি। শুনা যায় চারি দিকে দিবসরজনী বাজিতেছে বিরাট সংসার-শঙ্খধ্বনি লক্ষ লক্ষ জীবন-ফুৎকারে। এত বেলা যাত্রী নরনারী-সাথে করিয়াছি মেলা পুরীপ্রান্তে পান্থশালা-'পরে। স্নানে পানে অপরাহ্ন হয়ে এল গল্পে হাসিগানে-- এখন মন্দিরে তব এসেছি, হে নাথ, নির্জনে চরণতলে করি প্রণিপাত এ জন্মের পূজা সমাপিব। তার পর নবতীর্থে যেতে হবে হে বসুধেশ্বর।
জননী, কন্যারে আজ বিদায়ের ক্ষণে আপন অতীতরূপ পড়িয়াছে মনে যখন বালিকা ছিলে। মাতৃক্রোড় হতে তোমারে ভাসালো ভাগ্য দূরতর স্রোতে সংসারের। তার পর গেল কত দিন দুঃখে সুখে, বিচ্ছেদের ক্ষত হল ক্ষীণ। এ-জন্মের আরম্ভভূমিকা-- সংকীর্ণ সে প্রথম উষার মতো-- ক্ষণিক প্রদোষে মিলাইল লয়ে তার স্বর্ণ কুহেলিকা। বাল্যে পরেছিলে শুভ্র মাঙ্গল্যের টিকা, সিন্দূররেখায় হল লীন। সে-রেখাটি জীবনের পূর্বভাগ দিল যেন কাটি। আজ সেই ছিন্নখণ্ড ফিরে এল শেষে তোমার কন্যার মাঝে অশ্রুর আবেশে।