আজ ভাবি মনে-মনে, তাহারে কি জানি যাহার বলায় মোর বাণী, যাহার চলায় মোর চলা, আমার ছবিতে যার কলা, যার সুর বেজে ওঠে মোর গানে গানে, সুখে দুঃখে দিনে দিনে বিচিত্র যে আমার পরানে। ভেবেছিনু আমাতে সে বাঁধা এ প্রাণের যত হাসা কাঁদা গণ্ডি দিয়ে মোর মাঝে ঘিরেছে তাহারে মোর সকল খেলায় সব কাজে। ভেবেছিনু সে আমারি আমি আমার জনম বেয়ে আমার মরণে যাবে থামি। তবে কেন পড়ে মনে, নিবিড় হরষে প্রেয়সীর দরশে পরশে বারে বারে পেয়েছিনু তারে অতল মাধুরীসিন্ধুতীরে আমার অতীত সে আমিরে। জানি তাই, সে আমি তো বন্দী নহে আমার সীমায়, পুরাণে বীরের মহিমায় আপনা হারায়ে তারে পাই আপনাতে দেশকাল নিমেষে পারায়ে। যে আমি ছায়ার আবরণে লুপ্ত হয়ে থাকে মোর কোণে সাধকের ইতিহাসে তারি জ্যোতির্ময় পাই পরিচয়। যুগে যুগে কবির বাণীতে সেই আমি আপনারে পেরেছে জানিতে। দিগন্তে বাদলবায়ুবেগে নীল মেঘে বর্ষা আসে নাবি। বসে বসে ভাবি এই আমি যুগে যুগান্তরে কত মূর্তি ধরে, কত নামে কত জন্ম কত মৃত্যু করে পারাপার কত বারম্বার। ভূত ভবিষ্যৎ লয়ে যে বিরাট অখণ্ড বিরাজে সে মানব-মাঝে নিভৃতে দেখিব আজি এ আমিরে, সর্বত্রগামীরে।
যে তোমারে দূরে রাখি নিত্য ঘৃণা করে, হে মোর স্বদেশ, মোরা তারি কাছে ফিরি সম্মানের তরে পরি তারি বেশ। বিদেশী জানে না তোরে অনাদরে তাই করে অপমান, মোরা তারি পিছে থাকি যোগ দিতে চাই আপন সন্তান। তোমার যা দৈন্য, মাতঃ, তাই ভূষা মোর কেন তাহা ভুলি? পরধনে ধিক্ গর্ব, করি করজোড় ভরি ভিক্ষাঝুলি! পুণ্যহস্তে শাক-অন্ন তুলে দাও পাতে তাই যেন রুচে, মোটা বস্ত্র বুনে দাও যদি নিজহাতে তাহে লজ্জা ঘুচে। সেই সিংহাসন--যদি অঞ্চলটি পাত, কর স্নেহ দান। যে তোমারে তুচ্ছ করে সে আমারে, মাতঃ, কী দিবে সম্মান!