হে ভুবন আমি যতক্ষণ তোমারে না বেসেছিনু ভালো ততক্ষণ তব আলো খুঁজে খুঁজে পায় নাই তার সব ধন। ততক্ষণ নিখিল গগন হাতে নিয়ে দীপ তার শূন্যে শূন্যে ছিল পথ চেয়ে। মোর প্রেম এল গান গেয়ে; কী যে হল কানাকানি দিল সে তোমার গলে আপন গলার মালাখানি। মুগ্ধচক্ষে হেসে তোমারে সে গোপনে দিয়েছে কিছু যা তোমার গোপন হৃদয়ে তারার মালার মাঝে চিরদিন রবে গাঁথা হয়ে।
খ্যাতি নিন্দা পার হয়ে জীবনের এসেছি প্রদোষে, বিদায়ের ঘাটে আছি বসে। আপনার দেহটারে অসংশয়ে করেছি বিশ্বাস, জরার সুযোগ পেয়ে নিজেরে সে করে পরিহাস, সকল কাজেই দেখি কেবলি ঘটায় বিপর্যয়, আমার কর্তৃত্ব করে ক্ষয়; সেই অপমান হতে বাঁচাতে যাহারা অবিশ্রাম দিতেছে পাহারা, পাশে যারা দাঁড়ায়েছে দিনান্তের শেষ আয়োজনে, নাম না'ই বলিলাম তাহারা রহিল মনে মনে। তাহারা দিয়েছে মোরে সৌভাগ্যের শেষ পরিচয়, ভুলায়ে রাখিছে তারা দুর্বল প্রাণের পরাজয়; এ কথা স্বীকার তারা করে খ্যাতি প্রতিপত্তি যত সুযোগ্য সক্ষমদের তরে; তাহারাই করিছে প্রমাণ অক্ষমের ভাগ্যে আছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সেই দান। সমস্ত জীবন ধরে খ্যাতির খাজনা দিতে হয়, কিছু সে সহে না অপচয়; সব মূল্য ফুরাইলে যে দৈন্য প্রেমের অর্ঘ্য আনে অসীমের স্বাক্ষর সেখানে।
মা গো, আমায় ছুটি দিতে বল্, সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা। এখন আমি তোমার ঘরে ব'সে করব শুধু পড়া-পড়া খেলা। তুমি বলছ দুপুর এখন সবে, নাহয় যেন সত্যি হল তাই, একদিনও কি দুপুরবেলা হলে বিকেল হল মনে করতে নাই? আমি তো বেশ ভাবতে পারি মনে সুয্যি ডুবে গেছে মাঠের শেষে, বাগ্দি-বুড়ি চুবড়ি ভরে নিয়ে শাক তুলেছে পুকুর-ধারে এসে। আঁধার হল মাদার-গাছের তলা, কালি হয়ে এল দিঘির জল, হাটের থেকে সবাই এল ফিরে, মাঠের থেকে এল চাষির দল। মনে কর্-না উঠল সাঁঝের তারা, মনে কর্-না সন্ধে হল যেন। রাতের বেলা দুপুর যদি হয় দুপুর বেলা রাত হবে না কেন।