পেঁচোটাকে মাসি তার যত দেয় আস্করা, মুশকিল ঘটে তত এক সাথে বাস করা। হঠাৎ চিমটি কাটে কপালের চামড়ায়-- বলে সে, 'এমনি ক'রে ভিমরুল কামড়ায়।' আমার বিছানা নিয়ে খেলা ওর চাষ-করা-- মাথার বালিশ থেকে তুলোগুলো হ্রাস-করা।
হৃদয়-পানে হৃদয় টানে, নয়ন-পানে নয়ন ছোটে, দুটি প্রাণীর কাহিনীটা এইটুকু বৈ নয়কো মোটে। শুক্লসন্ধ্যা চৈত্র মাসে হেনার গন্ধ হাওয়ায় ভাসে-- আমার বাঁশি লুটায় ভূমে, তোমার কোলে ফুলের পুঁজি। তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি। বাসন্তী-রঙ বসনখানি নেশার মতো চক্ষে ধরে, তোমার গাঁথা যূথীর মালা স্তুতির মতো বক্ষে পড়ে। একটু দেওয়া একটু রাখা, একটু প্রকাশ একটু ঢাকা, একটু হাসি একটু শরম-- দুজনের এই বোঝাবুঝি। তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি। মধুমাসের মিলন-মাঝে মহান কোনো রহস্য নেই, অসীম কোনো অবোধ কথা যায় না বেধে মনে-মনেই। আমাদের এই সুখের পিছু ছায়ার মতো নাইকো কিছু, দোঁহার মুখে দোঁহে চেয়ে নাই হৃদয়ের খোঁজাখুঁজি। মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি। ভাষার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে খুঁজি নে ভাই ভাষাতীত, আকাশ-পানে বাহু তুলে চাহি নে ভাই আশাতীত। যেটুকু দিই যেটুকু পাই তাহার বেশি আর কিছু নাই-- সুখের বক্ষ চেপে ধরে করি নে কেউ যোঝাযুঝি। মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি। শুনেছিনু প্রেমের পাথার নাইকো তাহার কোনো দিশা, শুনেছিনু প্রেমের মধ্যে অসীম ক্ষুধা অসীম তৃষা-- বীণার তন্ত্রী কঠিন টানে ছিঁড়ে পড়ে প্রেমের তানে, শুনেছিনু প্রেমের কুঞ্জে অনেক বাঁকা গলিঘুঁজি। আমাদের এই দোঁহার মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।