যেন শেষ গানে মোর সব রাগিণী পূরে-- আমার সব আনন্দ মেলে তাহার সুরে। যে আনন্দে মাটির ধরা হাসে অধীর হয়ে তরুলতায় ঘাসে, যে আনন্দে দুই পাগলের মতো জীবন-মরণ বেড়ায় ভুবন ঘুরে-- সেই আনন্দ মেলে তাহার সুরে। যে আনন্দ আসে ঝড়ের বেশে, ঘুমন্ত প্রাণ জাগায় অট্ট হেসে। যে আনন্দ দাঁড়ায় আঁখিজলে দুঃখ-ব্যথার রক্তশতদলে, যা আছে সব ধুলায় ফেলে দিয়ে যে আনন্দে বচন নাহি ফুরে সেই আনন্দ মেলে তাহার সুরে।
স্বর্গ কোথায় জানিস কি তা ভাই। তার ঠিক-ঠিকানা নাই। তার আরম্ভ নাই,নাই রে তাহার শেষ, ওরে নাই রে তাহার দেশ, ওরে নাই রে তাহার দিশা, ওরে নাই রে দিবস, নাই রে তাহার নিশা। ফিরেছি সেই স্বর্গে শূন্যে শূন্যে ফাঁকির ফাঁকা ফানুস কত যে যুগ-যুগান্তরের পুণ্যে জন্মেছি আজ মাটির 'পরে ধুলামাটির মানুষ। স্বর্গ আজি কৃতার্থ তাই আমার দেহে, আমার প্রেমে, আমার স্নেহে, আমার ব্যাকুল বুকে, আমার লজ্জা, আমার সজ্জা, আমার দুঃখে সুখে। আমার জন্ম-মৃত্যুরি তরঙ্গে নিত্যনবীন রঙের ছটায় খেলায় সে-যে রঙ্গে। আমার গানে স্বর্গ আজি ওঠে বাজি, আমার প্রাণে ঠিকানা তার পায়, আকাশভরা আনন্দে সে আমারে তাই চায়। দিগঙ্গনার অঙ্গনে আজ বাজল যে তাই শঙ্খ, সপ্ত সাগর বাজায় বিজয়-ডঙ্ক তাই ফুটেছে ফুল, বনের পাতায় ঝরনাধারায় তাই রে হুলুস্থুল। স্বর্গ আমার জন্ম নিল মাটি-মায়ের কোলে বাতাসে সেই খবর ছোটে আনন্দ-কল্লোলে।