বন্ধ হয়ে এল স্রোতের ধারা, শৈবালেতে আটক প'ল তরী। নৌকা-বাওয়া এবার করো সারা-- নাই রে হাওয়া, পাল নিয়ে কী করি। এখন তবে চলো নদীর তটে, গোধূলিতে আকাশ হল রাঙা। পশ্চিমেতে আঁকা আগুন-পটে বাব্লাবনে ওই দেখা যায় ডাঙা। ভেসো না আর, যেয়ো না আর ভেসে-- চলো এখন, যাবে যে দূরদেশে। এখন তোমায় তারার ক্ষীণালোকে চলতে হবে মাঠের পথে একা। গিরি কানন পড়বে কি আর চোখে, কুটিরগুলি যাবে কি আর দেখা। পিছন হতে দখিন-সমীরণে ফুলের গন্ধ আসবে আঁধার বেয়ে, অসময়ে হঠাৎ ক্ষণে ক্ষণে আবেশেতে দিবে হৃদয় ছেয়ে। চলো এবার, কোরো না আর দেরি-- মেঘের আভাস আকাশ-কোণে হেরি। হাটের সাথে ঘাটের সাথে আজি ব্যাবসা তোর বন্ধ হয়ে গেল। এখন ঘরে আয় রে ফিরে মাঝি, আঙিনাতে আসনখানি মেলো। ভুলে যা রে দিনের আনাগোনা, জ্বালতে হবে সারা রাতের আলো। শ্রান্ত ওরে, রেখে দে জাল-বোনা, গুটিয়ে ফেলো সকল মন্দ ভালো। ফিরিয়ে আনো ছড়িয়ে-পড়া মন-- সফল হোক সকল সমাপন।
সুধাকান্ত বচনের রচনে অক্লান্ত-- মুখে কথা নাহি বাধে, পসরা ভরিয়া রাখে বহুবিধ কুড়ানো সংবাদে, প্রত্যহ কন্ঠের পায় সাড়া পাড়া হতে পাড়া। আজি তার আত্মত্যাগ বাক্যত্যাগে হয়েছে কঠোর রোগীর সেবার কার্যে মোর। ও পাশের ঘরে দিন কাটে সঙ্গীহীন নিঃশব্দ প্রহরে। বাধা দেয় যাদের প্রবেশে আহা যদি কাছে পেত, এই ব'লে মরে যে ক্ষোভে সে। তবু বিধাতার বর আছে তার পর, বাক্যরুদ্ধ হয়ে গেলে তবু তার কাছে অন্য পথ আছে। অনায়াসে শব্দ আর মিল কলমের মুখে তার করে কিলবিল। মোর দিনমান মুখর খাতায় তার যাহা তাহা দিতেছে জোগান রচে বসি তুচ্ছতার ছবি-- ভয়ে মরি ছাই-চাপা পড়ে বুঝি কবি। মনে আছে একমাত্র আশা বুদ্বুদের ইতিহাসে সুদীর্ঘ কালের নেই ভাষা। বাহিরেতে চলিয়াছে দেশে দেশে বিরাটের পালা অকিঞ্চিৎকরের স্তূপ জমাইছে এ আরোগ্যশালা। লিখিবার কথা কোথা রুদ্ধ ঘরে দু' চক্ষু বুলাই। কোনোমতে ছড়া কেটে নিজের ভুলাই। ধাক্কা তারে দেয় পিছে খ্যাপা ঊনপঞ্চাশ বায়ু,এবেলা ওবেলা তার আয়ু, এরি মধ্যে কবি-বেশে সুধাকান্ত এল ইহাকেই বলে না কি strange bed-fellow!