মোর চেতনায় আদিসমুদ্রের ভাষা ওঙ্কারিয়া যায়; অর্থ তার নাহি জানি, আমি সেই বাণী। শুধু ছলছল কলকল; শুধু সুর, শুধু নৃত্য, বেদনার কলকোলাহল; শুধু এ সাঁতার-- কখনো এ পারে চলা, কখনো ও পার, কখনো বা অদৃশ্য গভীরে, কভু বিচিত্রের তীরে তীরে। ছন্দের তরঙ্গদোলে কত যে ইঙ্গিত ভঙ্গি জেগে ওঠে, ভেসে যায় চলে। স্তব্ধ মৌনী অচলের বহিয়া ইশারা নিরন্তর স্রোতোধারা অজানা সম্মুখে ধায়, কোথা তার শেষ কে জানে উদ্দেশ। আলোছায়া ক্ষণে ক্ষণে দিয়ে যায় ফিরে ফিরে স্পর্শের পর্যায়। কভু দূরে কখনো নিকটে প্রবাহের পটে মহাকাল দুই রূপ ধরে পরে পরে কালো আর সাদা। কেবলি দক্ষিণে বামে প্রকাশ ও প্রকাশের বাধা অধরার প্রতিবিম্ব গতিভঙ্গে যায় এঁকে এঁকে, গতিভঙ্গে যায় ঢেকে ঢেকে।
রাগ কর নাই কর, শেষ কথা এসেছি বলিতে-- তোমার প্রদীপ আছে, নাইকো সলিতে। শিল্প তার মূল্যবান, দেয় না সে আলো, চোখেতে জড়ায় লোভ, মনেতে ঘনায় ছায়া কালো অবসাদে। তবু তারে প্রাণপণে রাখি যতনেই, ছেড়ে যাব তার পথ নেই। অন্ধকারে অন্ধদৃষ্টি নানাবিধ স্বপ্ন দিয়ে ঘেরে আচ্ছন্ন করিয়া বাস্তবেরে। অস্পষ্ট তোমারে যবে ব্যগ্রকণ্ঠে ডাক দিই অত্যুক্তির স্তবে তোমারে লঙ্ঘন করি সে-ডাক বাজিতে থাকে সুরে তাহারি উদ্দেশে আজো যে রয়েছে দূরে। হয়তো সে আসিবে না কভু, তিমিরে আচ্ছন্ন তুমি তারেই নির্দেশ কর তবু। তোমার এ দূত অন্ধকার গোপনে আমার ইচ্ছারে করিয়া পঙ্গু গতি তার করেছে হরণ, জীবনের উৎসজলে মিশায়েছে মাদক মরণ। রক্তে মোর যে-দুর্বল আছে শঙ্কিত বক্ষের কাছে তারেই সে করেছে সহায়, পশুবাহনের মতো মোহভার তাহারে বহায়। সে যে একান্তই দীন, মূল্যহীন, নিগড়ে বাঁধিয়া তারে আপনারে বিড়ম্বিত করিতেছ পূর্ণ দান হতে, এ প্রমাদ কখনো কি দেখিবে আলোতে। প্রেম নাহি দিয়ে যারে টানিয়াছ উচ্ছিষ্টের লোভে সে-দীন কি পার্শ্বে তব শোভে। কভু কি জানিতে পাবে অসম্মানে নত এই প্রাণ বহন করিছে নিত্য তোমারি আপন অসম্মান। আমারে যা পারিলে না দিতে সে-কার্পণ্য তোমারেই চিরদিন রহিল বঞ্চিতে।