মনে হয় কী একটি শেষ কথা আছে, সে কথা হইলে বলা সব বলা হয়। কল্পনা কাঁদিয়া ফিরে তারি পাছে পাছে, তারি তরে চেয়ে আছে সমস্ত হৃদয়। শত গান উঠিতেছে তারি অন্বেষণে, পাখির মতন ধায় চরাচরময়। শত গান ম'রে গিয়ে, নূতন জীবনে একটি কথায় চাহে হইতে বিলয়। সে কথা হইলে বলা নীরব বাঁশরি, আর বাজাব না বীণা চিরদিন-তরে। সে কথা শুনিতে সবে আছে আশা করি, মানব এখনো তাই ফিরিছে না ঘরে। সে কথায় আপনারে পাইব জানিতে, আপনি কৃতার্থ হব আপন বাণীতে।
যাহা-কিছু ছিল সব দিনু শেষ করে ডালাখানি ভরে-- কাল কী আনিয়া দিব যুগল চরণে তাই ভাবি মনে। বসন্তে সকল ফুল নিঃশেষে ফুটায়ে নিয়ে তরু তার পরে এক দিনে দীনহীন, শূন্যে দেবতার পানে চাহে রিক্তকরে। আজি দিন শেষ হলে যদি মোর গান হয় অবসান, কাল প্রাতে এ গানের স্মৃতিসুখলেশ রবে না কি শেষ। শূন্য থালে মৌনকণ্ঠে নতমুখে আসি যদি তোমার সম্মুখে, তখন কি অগৌরবে চাহিবে না একবার ভকতের মুখে। দিই নি কি প্রাণপূর্ণ হৃদিপদ্মখানি পাদপদ্মে আনি? দিই নি কি কোনো ফুল অমর করিয়া অশ্রুতে ভরিয়া। এত গান গাহিয়াছি, তার মাঝে নাহি কি গো হেন কোনো গান আমি চলে গেলে তবু বহিবে যে চিরদিন অনন্ত পরান। সেই কথা মনে করে দিবে না কি নব বরমাল্য তব-- ফেলিবে না আঁখি হতে একবিন্দু জল করুণাকোমল, আমার বসন্তশেষে রিক্তপুষ্প দীনবেশে নীরবে যেদিন ছলছল-আঁখিজলে দাঁড়াইব সভাতলে উপহারহীন।