বাছা রে, তোর চক্ষে কেন জল। কে তোরে যে কী বলেছে আমায় খুলে বল্। লিখতে গিয়ে হাতে মুখে মেখেছ সব কালি,নোংরা ব'লে তাই দিয়েছে গালি? ছি ছি, উচিত এ কি। পূর্ণশশী মাখে মসী -- নোংরা বলুক দেখি। বাছা রে, তোর সবাই ধরে দোষ। আমি দেখি সকল-তাতে এদের অসন্তোষ। খেলতে গিয়ে কাপড়খানা ছিঁড়ে খুঁড়ে এলে তাই কি বলে লক্ষ্মীছাড়া ছেলে। ছি ছি, কেমন ধারা। ছেঁড়া মেঘে প্রভাত হাসে, সে কি লক্ষ্মীছাড়া। কান দিয়ো না তোমায় কে কী বলে। তোমার নামে অপবাদ যে ক্রমেই বেড়ে চলে। মিষ্টি তুমি ভালোবাস তাই কি ঘরে পরে লোভী বলে তোমার নিন্দে করে! ছি ছি, হবে কী। তোমায় যারা ভালোবাসে তারা তবে কী।
পথের নেশা আমায় লেগেছিল, পথ আমারে দিয়েছিল ডাক-- সূর্য তখন পূর্বগগনমূলে, নৌকা তখন বাঁধা নদীর কূলে, শিশির তখন শুকায় নিকো ফুলে, শিবালয়ে উঠল বেজে শাঁখ। পথের নেশা তখন লেগেছিল, পথ আমারে দিয়েছিল ডাক। আঁকাবাঁকা রাঙা মাটির লেখা ঘরছাড়া ওই নানা দেশের পথ-- প্রভাত-কালে অপার-পানে চেয়ে কী মোহগান উঠতেছিল গেয়ে, উদার সুরে ফেলতেছিল ছেয়ে বহুদূরের অরণ্য পর্বত। নানা দিনের নানা-পথিক-চলা ঘরছাড়া ওই নানা দেশের পথ। ভাবি নাইকো কেন কিসের লাগি ছুটে চলে এলেম পথের 'পরে। নিত্য কেবল এগিয়ে চলার সুখ, বাহির হওয়ার অনন্ত কৌতুক, প্রতি পদেই অন্তর উৎসুক অজানা কোন্ নিরুদ্দেশের তরে। ভোরের বেলা দুয়ার খুলে দিয়ে বাহির হয়ে এলেম পথের 'পরে। বেলা এখন অনেক হয়ে গেছে, পেরিয়ে চলে এলেম বহু দূর। ভেবেছিলেম পথের বাঁকে বাঁকে নব নব ভাগ্য আমায় ডাকে, হঠাৎ যেন দেখতে পাব কাকে, শুনতে যেন পাব নূতন সুর। তার পরে তো অনেক বেলা হল, পেরিয়ে চলে এলেম বহু দূর। অনেক দেখে ক্লান্ত এখন প্রাণ, ছেড়েছি সব অকস্মাতের আশা। এখন কেবল একটি পেলেই বাঁচি, এসেছি তাই ঘাটের কাছাকাছি-- এখন শুধু আকুল মনে যাচি তোমার পারে খেয়ার তরী ভাসা। জেনেছি আজ চলেছি কার লাগি ছেড়েছি সব অকস্মাতের আশা।
অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না। এবার হৃদয়-মাঝে লুকিয়ে বোসো, কেউ জানবে না, কেউ বলবে না। বিশ্বে তোমার লুকোচুরি, দেশ-বিদেশে কতই ঘুরি, এবার বলো, আমার মনের কোণে দেবে ধরা, ছলবে না আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না। জানি আমার কঠিন হৃদয় চরণ রাখার যোগ্য সে নয়, সখা, তোমার হাওয়া লাগলে হিয়ায় তবু কি প্রাণ গলবে না। নাহয় আমার নাই সাধনা, ঝরলে তোমার কৃপার কণা তখন নিমেষে কি ফুটবে না ফুল, চকিতে ফল ফলবে না। আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না।