জাগার থেকে ঘুমোই, আবার ঘুমের থেকে জাগি,-- অনেক সময় ভাবি মনে কেন, কিসের লাগি? আমাকে, মা, যখন তুমি ঘুম পাড়িয়ে রাখ তখন তুমি হারিয়ে গিয়ে তবু হারাও নাকো। রাতে সূর্য, দিনে তারা পাই নে, হাজার খুঁজি। তখন তা'রা ঘুমের সূর্য, ঘুমের তারা বুঝি? শীতের দিনে কনকচাঁপা যায় না দেখা গাছে, ঘুমের মধ্যে নুকিয়ে থাকে নেই তবুও আছে। রাজকন্যে থাকে, আমার সিঁড়ির নিচের ঘরে। দাদা বলে, "দেখিয়ে দে তো।" বিশ্বাস না করে। কিন্তু, মা, তুই জানিস নে কি আমার সে রাজকন্যে ঘুমের তলায় তলিয়ে থাকে, দেখি নে সেইজন্যে। নেই তবুও আছে এমন নেই কি কত জিনিস? আমি তাদের অনেক জানি, তুই কি তাদের চিনিস? যেদিন তাদের রাত পোয়াবে উঠবে চক্ষু মেলি সেদিন তোমার ঘরে হবে বিষম ঠেলাঠেলি। নাপিত ভায়া, শেয়াল ভায়া, ব্যাঙ্গমা বেঙ্গুমী ভিড় ক'রে সব আসবে যখন কী যে করবে তুমি! তখন তুমি ঘুমিয়ে প'ড়ো, আমিই জেগে থেকে নানারকম খেলায় তাদের দেব ভুলিয়ে রেখে। তার পরে যেই জাগবে তুমি লাগবে তাদের ঘুম, তখন কোথাও কিচ্ছুই নেই সমস্ত নিজ্ঝুম।
এই জ্যোৎস্নারাতে জাগে আমার প্রাণ; পাশে তোমার হবে কি আজ স্থান। দেখতে পাব অপূর্ব সেই মুখ, রইবে চেয়ে হৃদয় উৎসুক, বারে বারে চরণ ঘিরে ঘিরে ফিরবে আমার অশ্রুভরা গান? সাহস করে তোমার পদমূলে আপনারে আজ ধরি নাই যে তুলে, পড়ে আছি মাটিতে মুখ রেখে, ফিরিয়ে পাছে দাও হে আমার দান। আপনি যদি আমার হাতে ধরে কাছে এসে উঠতে বল মোরে, তবে প্রাণের অসীম দরিদ্রতা এই নিমেষেই হবে অবসান।