দুজন সখীরে দূর হতে দেখেছিনু অজানার তীরে। জানি নে কাদের ঘর; দ্বার খোলা আকাশের পানে, দিনান্তে কহিতেছিল কী কথা কে জানে। এক নিমিষেতে অপরিচয়ের দেখা চলে যেতে যেতে উপরের দিকে চেয়ে। দুটি মেয়ে যেন দুটি আলোকণা আমার মনের পথে ছায়াতলে করিল রচনা ক্ষণতরে আকাশের বাণী, অর্থ তার নাহি জানি। যাহারা ওদের চেনে, নাম জানে, কাছে লয় টেনে, একসাথে দিন যাপে, প্রত্যহের বিচিত্র আলাপে ওদের বেঁধেছে তারা ছোটো করে পরিচয়ডোরে। সত্য নয় ঘরের ভিত্তিতে ঘেরা সেই পরিচয়। যাবে দিন, সে জানা কোথায় হবে লীন। বন্ধহীন অনন্তের বক্ষতলে উঠিয়াছে জেগে কী নিশ্বাসবেগে যুগলতরঙ্গসম। অসীম কালের মাঝে ওরা অনুপম, ওরা অনুদ্দেশ, কোথায় ওদের শেষ ঘরের মানুষ জানে সে কি? নিত্যের চিত্তের পটে ক্ষণিকের চিত্র গেনু দেখি-- আশ্চর্য সে লেখা, সে তুলির রেখা যুগযুগান্তর-মাঝে একবার দেখা দিল নিজে-- জানি নে তাহার পরে কী যে।
এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি, দিল পাড়ি-- কামরায় গাড়িভরা ঘুম, রজনী নিঝুম। অসীম আঁধারে কালি-লেপা কিছুনয় মনে হয় যারে নিদ্রার পারে রয়েছে সে পরিচয়হারা দেশে। ক্ষণ-আলো ইঙ্গিতে উঠে ঝলি, পার হয়ে যায় চলি অজানার পরে অজানায়, অদৃশ্য ঠিকানায়। অতিদূর-তীর্থের যাত্রী, ভাষাহীন রাত্রি, দূরের কোথা যে শেষ ভাবিয়া না পাই উদ্দেশ। চালায় যে নাম নাহি কয়; কেউ বলে, যন্ত্র সে, আর কিছু নয়। মনোহীন বলে তারে, তবু অন্ধের হাতে প্রাণমন সঁপি দিয়া বিছানা সে পাতে। বলে, সে অনিশ্চিত, তবু জানে অতি নিশ্চিত তার গতি। নামহীন যে অচেনা বার বার পার হয়ে যায় অগোচরে যারা সবে রয়েছে সেথায়, তারি যেন বহে নিশ্বাস, সন্দেহ-আড়ালেতে মুখ-ঢাকা জাগে বিশ্বাস। গাড়ি চলে, নিমেষ বিরাম নাই আকাশের তলে। ঘুমের ভিতরে থাকে অচেতনে কোন্ দূর প্রভাতের প্রত্যাশা নিদ্রিত মনে।