তখন বয়স ছিল কাঁচা; কতদিন মনে মনে এঁকেছি নিজের ছবি, বুনো ঘোড়ার পিঠে সওয়ার, জিন নেই, লাগাম নেই, ছুটেছি ডাকাত-হানা মাঠের মাঝখান দিয়ে ভরসন্ধ্যেবেলায়; ঘোড়ার খুরে উড়ছে ধুলো ধরণী যেন পিছু ডাকছে আঁচল দুলিয়ে। আকাশে সন্ধ্যার প্রথম তারা দূরে মাঠের সীমানায় দেখা যায় একটিমাত্র ব্যগ্র বিরহী আলো একটি কোন্ ঘরে নিদ্রাহীন প্রতীক্ষায়। যে ছিল ভাবীকালে আগে হতে মনের মধ্যে ফিরছিল তারি আবছায়া, যেমন ভাবী আলোর আভাস আসে ভোরের প্রথম কোকিল-ডাকা অন্ধকারে। তখন অনেকখানি সংসার ছিল অজানা, আধ্জানা। তাই অপরূপের রাঙা রঙটা মনের দিগন্ত রেখেছিলে রাঙিয়ে; আসন্ন ভালোবাসা এনেছিল অঘটন-ঘটনার স্বপ্ন। তখন ভালোবাসার যে কল্পরূপ ছিল মনে তার সঙ্গে মহাকাব্যযুগের দুঃসাহসের আনন্দ ছিল মিলিত। এখন অনেক খবর পেয়েছি জগতের, মনে ঠাওরেছি সংসারের অনেকটাই মার্কামারা খবরের মালখানা। মনের রসনা থেকে অজানার স্বাদ গেছে মরে, অনুভবে পাইনে ভালোবাসায় সম্ভবের মধ্যে নিয়তই অসম্ভব, জানার মধ্যে অজানা, কথার মধ্যে রূপকথা। ভুলেছি প্রিয়ার মধ্যে আছে সেই নারী, যে থাকে সাত সমুদ্রের পারে, সেই নারী আছে বুঝি মায়ার ঘুমে, যার জন্যে খুঁজতে হবে সোনার কাঠি।
পাহাড়ের নীলে আর দিগন্তের নীলে শূন্যে আর ধরাতলে মন্ত্র বাঁধে ছন্দে আর মিলে। বনেরে করায় স্নান শরতের রৌদ্রের সোনালি। হলদে ফুলের গুচ্ছে মধু খোঁজে বেগুনি মৌমাছি। মাঝখানে আমি আছি, চৌদিকে আকাশ তাই দিতেছে নিঃশব্দ করতালি। আমার আনন্দে আজ একাকার ধ্বনি আর রঙ, জানে তা কি এ কালিম্পঙ। ভান্ডারে সঞ্চিত করে পর্বতশিখর অন্তহীন যুগ-যুগান্তর। আমার একটি দিন বরমাল্য পরাইল তারে, এ শুভ সংবাদ জানাবারে অন্তরীক্ষে দুর হতে দুরে অনাহত সুরে প্রভাতে সোনার ঘণ্টা বাজে ঢঙ ঢঙ, শুনিছে কি এ কালিম্পঙ।