এসেছিল বহু আগে যারা মোর দ্বারে, যারা চলে গেছে একেবারে, ফাগুন-মধ্যাহ্নবেলা শিরীষছায়ায় চুপে চুপে তারা ছায়ারূপে আসে যায় হিল্লোলিত শ্যাম দুর্বাদলে। ঘন কালো দিঘিজলে পিছনে-ফিরিয়া-চাওয়া আঁখি জ্বলো জ্বলো করে ছলোছলো। মরণের অমরতালোকে ধূসর আঁচল মেলি ফিরে তারা গেরুয়া আলোকে। যে এখনো আসে নাই মোর পথে, কখনো যে আসিবে না আমার জগতে, তার ছবি আঁকিয়াছি মনে-- একেলা সে বাতায়নে বিদেশিনী জন্মকাল হতে। সে যেন শেঁউলি ভাসে ক্ষীণ মৃদু স্রোতে, কোথায় তাহার দেশ নাই সে উদ্দেশ। চেয়ে আছে দূর-পানে কার লাগি আপনি সে নাহি জানে। সেই দূরে ছায়ারূপে রয়েছে সে বিশ্বের সকল-শেষে যে আসিতে পারিত তবুও এল না কভুও। জীবনের মরীচিকাদেশে মরুকন্যাটির আঁখি ফিরে ভেসে ভেসে।
কারে দূর নাহি কর। যত করি দান তোমারে হৃদয় মন, তত হয় স্থান সবারে লইতে প্রাণে। বিদ্বেষ যেখানে দ্বার হতে কারেও তাড়ায় অপমানে তুমি সেই সাথে যাও; যেথা অহংকার ঘৃণাভরে ক্ষুদ্রজনে রুদ্ধ করে দ্বার সেথা হতে ফির তুমি; ঈর্ষা চিত্তকোণে বসি বসি ছিদ্র করে তোমারি আসনে তপ্ত শূলে। তুমি থাক,যেথায় সবাই সহজে খুঁজিয়া পায় নিজ নিজ ঠাঁই। ক্ষুদ্র রাজা আসে যবে, ভৃত্য উচ্চরবে হাঁকি কহে, "সরে যাও, দূরে যাও সবে।' মহারাজ তুমি যবে এস, সেই সাথে নিখিল জগৎ আসে তোমারি পশ্চাতে।