এ জীবনে সুন্দরের পেয়েছি মধুর আশীর্বাদ, মানুষের প্রীতিপাত্রে পাই তাঁরি সুধার আস্বাদ! দুঃসহ দুঃখের দিনে অক্ষত অপরাজিত আত্মারে লয়েছি আমি চিনে। আসন্ন মৃত্যুর ছায়া যেদিন করেছি অনুভব সেদিন ভয়ের হাতে হয় নি দুর্বল পরাভব। মহত্তম মানুষের স্পর্শ হতে হই নি বঞ্চিত, তাঁদের অমৃতবাণী অন্তরেতে করেছি সঞ্চিত। জীবনের বিধাতার যে দাক্ষিণ্য পেয়েছি জীবনে তাহারি স্মরণলিপি রাখিলাম সকৃতজ্ঞমনে।
নারীকে আর পুরুষকে যেই মিলিয়ে দিলেন বিধি পদ্য কাব্যে মানবজীবন পেল মিলের নিধি। কেবল যদি পুরুষ নিয়ে থাকত এ সংসার, গদ্য কাব্যে এই জীবনটা হ'ত একাক্কার। প্রোটন এবং ইলেক্ট্রনের যুগল মিলনেই জগৎটা যে পদ্য তাহার প্রমাণ হল সেই। জলে এবং স্থলে মিলে ছন্দে লাগায় তাল, আকাশেতে মহাগদ্য বিছান মহাকাল। কারণ তিনি তপস্বী যে বিশ্ব তাঁহার জ্ঞানে, প্রলয় তাঁহার ধ্যানে। সৃষ্টিকার্যে আলো এবং আঁধার অনন্ত কাল ধুয়ো ধরায় মিলের ছন্দ বাঁধার। জাগরণে আছেন তিনি শুদ্ধ জ্যোতির দেশে, আলো-আঁধার 'পরে তাঁহার স্বপ্ন বেড়ায় ভেসে। যারে বলি বাস্তব সে ছায়ার লিখন লিখা, অন্তবিহীন কল্পনাতে মহান মরীচিকা। বাস্তব যে অচল অটল বিশ্বকাব্যে তাই, তড়িৎকণার নৃত্য আছে বাস্তব তো নাই। গোলাপগুলোর পাপড়ি-চেয়ে শোভাটাই যে সত্য, কিন্তু শোভা কী পদার্থ কথায় হয় না কথ্য। বিশুদ্ধ ইঙ্গিত সে মাত্র, তাহার অধিক কী সে, কিসের বা ইঙ্গিত সে জিনিস, ভেবে কে পায় দিশে। নিউস্পেপার আছে পাবে প্রমাণযোগ্য বাক্য, মকদ্দমার দলিল আছে ঠিক কথাটার সাক্ষ্য। কাব্য বলে বেঠিক কথা, এক হয়ে যায় আর-- যেমন বেঠিক কথা বলে নিখিল সংসার। আজকে যাকে বাষ্প দেখি কালকে দেখি তারা, কেমন করে বস্তু বলি প্রকাণ্ড ইশারা। ফোটা-ঝরার মধ্যখানে এই জগতের বাণী কী যে জানায় কালে কালে স্পষ্ট কি তা জানি। বিশ্ব থেকে ধার নিয়েছি তাই আমরা কবি সত্য রূপে ফুটিয়ে তুলি অবাস্তবের ছবি। ছন্দ ভাষা বাস্তব নয়, মিল যে অবাস্তব-- নাই তাহাতে হাট-বাজারের গদ্য কলরব। হাঁ-য়ে না-য়ে যুগল নৃত্য কবির রঙ্গভূমে। এতক্ষণ তো জাগায় ছিলুম এখন চলি ঘুমে।