পথে যতদিন ছিনু ততদিন অনেকের সনে দেখা। সব শেষ হল যেখানে সেথায় তুমি আর আমি একা। নানা বসন্তে নানা বরষায় অনেক দিবসে অনেক নিশায় দেখেছি অনেক, সহেছি অনেক, লিখেছি অনেক লেখা-- পথে যতদিন ছিনু ততদিন অনেকের সনে দেখা। কখন যে পথ আপনি ফুরালো, সন্ধ্যা হল যে কবে! পিছনে চাহিয়া দেখিনু কখন চলিয়া গিয়াছে সবে। তোমার নীরব নিভৃত ভবনে জানি না কখন পশিনু কেমনে। অবাক রহিনু আপন প্রাণের নূতন গানের রবে। কখন যে পথ আপনি ফুরালো, সন্ধ্যা হল যে কবে! চিহ্ন কি আছে শ্রান্ত নয়নে অশ্রুজলের রেখা? বিপুল পথের বিবিধ কাহিনী আছে কি ললাটে লেখা? রুধিয়া দিয়েছ তব বাতায়ন, বিছানো রয়েছে শীতল শয়ন, তোমার সন্ধ্যাপ্রদীপ-আলোকে তুমি আর আমি একা। নয়নে আমার অশ্রুজলের চিহ্ন কি যায় দেখা!
যারে সে বেসেছে ভালো তারে সে কাঁদায়। নূতন ধাঁধায় ক্ষণে ক্ষণে চমকিয়া দেয় তারে, কেবলই আলো-আঁধারে সংশয় বাধায়; ছল-করা অভিমানে বৃথা সে সাধায়। সে কি শরতের মায়া উড়ো মেঘে নিয়ে আসে বৃষ্টিভরা ছায়া। অনুকূল চাহনির তলে কী বিদ্যুৎ ঝলে। কেন দয়িতের মিনতিকে অভাবিত উচ্চ হাস্যে উড়াইয়া দেয় দিকে দিকে। তার পরে আপনার নির্দয় লীলায় আপনি সে ব্যথা পায়, ফিরে যে গিয়েছে তারে ফিরায়ে ডাকিতে কাঁদে প্রাণ; আপনার অভিমানে করে খানখান। কেন তার চিত্তাকাশে সারা বেলা পাগল হাওয়ার এই এলোমেলো খেলা। আপনি সে পারে না বুঝিতে যেদিকে চলিতে চায় কেন তার চলে বিপরীতে। গভীর অন্তরে যেন আপনার অগোচরে আপনার সাথে তার কী আছে বিরোধ, অন্যেরে আঘাত করে আত্মঘাতী ক্রোধ; মুহূর্তেই বিগলিত করুণায় অপমানিতের পায় প্রাণমন দেয় ঢালি-- নাম কি হেঁয়ালী।