এ ধূসর জীবনের গোধূলি, ক্ষীণ তার উদাসীন স্মৃতি, মুছে-আসা সেই ম্লান ছবিতে রঙ দেয় গুঞ্জনগীতি। ফাগুনের চম্পক পরাগে সেই রঙ জাগে, ঘুমভাঙা কোকিলের কূজনে সেই রঙ লাগে, সেই রঙ পিয়ালের ছায়াতে ঢেলে দেয় পূর্ণিমাতিথি। এই ছবি ভৈরবী-আলাপে দোলে মোর কম্পিত বক্ষে, সেই ছবি সেতারের প্রলাপে মরীচিকা এনে দেয় চক্ষে, বুকের লালিম-রঙে রাঙানো সেই ছবি স্বপ্নের অভ্রতথি।
গান গাহি বলে কেন অহংকার করা। শুধু গাহি বলে কেন কাঁদি না শরমে। খাঁচার পাখির মতো গান গেয়ে মরা, এই কি মা আদি অন্ত মানবজনমে। সুখ নাই, সুখ নাই, শুধু মর্মব্যথা-- মরীচিকা-পানে শুধু মরি পিপাসায়। কে দেখালে প্রলোভন, শূন্য অমরতা, প্রাণে ম'রে গানে কি রে বেঁচে থাকা যায়। কে আছ মলিন হেথা, কে আছ দুর্বল, মোরে তোমাদের মাঝে করো গো আহ্বান; বারেক একত্রে বসে ফেলি অশ্রুজল-- দূর করি হীন গর্ব, শূন্য অভিমান। তার পরে একসাথে এস কাজ করি, কেবলি বিলাপগান দূরে পরিহরি॥
ওগো মোর নাহি যে বাণী আকাশে হৃদয় শুধু বিছাতে জানি। আমি অমাবিভাবরী আলোকহারা মেলিয়া তারা চাহি নিঃশেষ পথপানে নিষ্ফল আশা নিয়ে প্রাণে। বহুদূরে বাজে তব বাঁশি, সকরুণ সুর আসে ভাসি বিহ্বল বায়ে নিদ্রাসমুদ্র পারায়ে। তোমারি সুরের প্রতিধ্বনি দিই যে ফিরায়ে-- সে কি তব স্বপ্নের তীরে ভাঁটার স্রোতের মতো লাগে ধীরে, অতি ধীরে ধীরে।