ভোরের বেলায় কখন এসে পরশ ক'রে গেছ হেসে। আমার ঘুমের দুয়ার ঠেলে কে সেই খবর দিল মেলে, জেগে দেখি আমার আঁখি আঁখির জলে গেছে ভেসে। মনে হল আকাশ যেন কইল কথা কানে কানে। মনে হল সকল দেহ পূর্ণ হল গানে গানে। হৃদয় যেন শিশিরনত ফুটল পূজার ফুলের মতো জীবননদী কূল ছাপিয়ে ছড়িয়ে গেল অসীম দেশে।
শ্লথপ্রাণ দুর্বলের স্পর্ধা আমি কভু সহিব না। লোলুপ সে লালায়িত, প্রেমেরে সে করে বিড়ম্বনা ক্লেদঘন চাটুবাক্যে, বাষ্পে বিজড়িত দৃষ্টি তার কলুষকুণ্ঠিত অঙ্গে লিপ্ত করে গ্লানি লালসার, আবেশে মন্থর কণ্ঠে গদ্গদ সে প্রার্থনা জানায় আলোকবঞ্চিত তার অন্তরের কানায় কানায় দুষ্ট ফেন উঠে বুদ্বুদিয়া-- ফেটে যায়, দেয় খুলি রুদ্ধ বিষবায়ু। গলিত মাংসের যেন ক্রিমিগুলি কল্পনাবিকার তার শিথিল চিন্তার তলে তলে আকুলিতে থাকে কিলিবিলি।-- যেন প্রাণপণ বলে মন তারে করে কষাঘাত! জীর্ণমজ্জা কাপুরুষে নারী যদি গ্রাহ্য করে, লজ্জিত দেবতা তারে দুষে অসহ্য সে অপমানে। নারী সে-যে মহেন্দ্রের দান, এসেছে ধরিত্রীতলে পুরুষেরে সঁপিতে সম্মান।
আজি শরততপনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়। ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগবিহগী কী যে গায়। আজি মধুর বাতাসে হৃদয় উদাসে রহে না আবাসে মন হায়। কোন্ কুসুমের আশে, কোন্ ফুলবাসে সুনীল আকাশে মন ধায়॥ আজি কে যেন গো নাই, এ প্রভাতে তাই জীবন বিফল হয় গো। তাই চারি দিকে চায় মন কেঁদে গায়-- "এ নহে, এ নহে, নয় গো।" কোন্ স্বপনের দেশে আছে এলোকেশে, কোন্ ছায়াময়ী অমরায়। আজি কোন্ উপবনে বিরহবেদনে আমারি কারণে কেঁদে যায়॥ আমি যদি গাঁথি গান অথির পরান সে গান শুনাব কারে আর। আমি যদি গাঁথি মালা লয়ে ফুলডালা কাহারে পরাব ফুলহার। আমি আমার এ প্রাণ যদি করি দান দিব প্রাণ তবে কার পায়। সদা ভয় হয় মনে পাছে অযতনে মনে মনে কেহ ব্যথা পায়॥