মহারাজ ক্ষণেক দর্শন দিতে হবে তোমার নির্জন ধামে। সেথা ডেকে লবে সমস্ত আলোক হতে তোমার আলোতে আমারে একাকী-সর্ব সুখদুঃখ হতে সর্ব সঙ্গ হতে, সমস্ত এ বসুধার কর্মবন্ধ হতে। দেব, মন্দিরে তোমার পশিয়াছি পৃথিবীর সর্বযাত্রীসনে, দ্বার মুক্ত ছিল যবে আরতির ক্ষণে। দীপাবলী নিবাইয়া চলে যাবে যবে নানা পথে নানা ঘরে পূজকেরা সবে, দ্বার রুধ হয়ে যাবে; শান্ত অন্ধকার আমারে মিলায়ে দিবে চরণে তোমার। একখানি জীবনের প্রদীপ তুলিয়া তোমারে হেরিব একা ভুবন ভুলিয়া।
এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি, দিল পাড়ি-- কামরায় গাড়িভরা ঘুম, রজনী নিঝুম। অসীম আঁধারে কালি-লেপা কিছুনয় মনে হয় যারে নিদ্রার পারে রয়েছে সে পরিচয়হারা দেশে। ক্ষণ-আলো ইঙ্গিতে উঠে ঝলি, পার হয়ে যায় চলি অজানার পরে অজানায়, অদৃশ্য ঠিকানায়। অতিদূর-তীর্থের যাত্রী, ভাষাহীন রাত্রি, দূরের কোথা যে শেষ ভাবিয়া না পাই উদ্দেশ। চালায় যে নাম নাহি কয়; কেউ বলে, যন্ত্র সে, আর কিছু নয়। মনোহীন বলে তারে, তবু অন্ধের হাতে প্রাণমন সঁপি দিয়া বিছানা সে পাতে। বলে, সে অনিশ্চিত, তবু জানে অতি নিশ্চিত তার গতি। নামহীন যে অচেনা বার বার পার হয়ে যায় অগোচরে যারা সবে রয়েছে সেথায়, তারি যেন বহে নিশ্বাস, সন্দেহ-আড়ালেতে মুখ-ঢাকা জাগে বিশ্বাস। গাড়ি চলে, নিমেষ বিরাম নাই আকাশের তলে। ঘুমের ভিতরে থাকে অচেতনে কোন্ দূর প্রভাতের প্রত্যাশা নিদ্রিত মনে।