রাজা বসেছেন ধ্যানে,
     বিশজন সর্দার
চীৎকাররবে তারা
     হাঁকিছে-- 'খবরদার'।
সেনাপতি ডাক ছাড়ে,
   মন্ত্রী সে দাড়ি নাড়ে,
যোগ দিল তার সাথে
   ঢাকঢোল-বর্দার।
ধরাতল কম্পিত,
  পশুপ্রাণী লম্ফিত,
রানীরা মূর্ছা যায়
   আড়ালেতে পর্দার।

করেছিনু যত সুরের সাধন
                   নতুন গানে,
খসে পড়ে তার স্মৃতির বাঁধন
                   আলগা টানে।
পুরানো অতীতে শেষে মিলে যায়--
                   বেড়ায় ঘুরে,
প্রেতের মতন জাগায় রাত্রি
                   মায়ার সুরে।    
               ২
ধরা নাহি দেয় কণ্ঠ এড়ায়
                   যে সুরখানি
স্বপ্নগহনে লুকিয়ে বেড়ায়
                   তাহার বাণী।
বুকের কাঁপনে নীরবে দোলে সে
                   ভিতরপানে,
মায়ার রাগিণী ধ্বনিয়া তোলে সে
                   সকলখানে।
               ৩
দিবস ফুরায়, কোথা চলে যায়
                   মর্তকায়া--
বাঁধা পড়ে থাকে ছবির রেখায়
                   ছায়ার ছায়া।
নিত্য ভাবিয়া করি যার সেবা
দেখিতে দেখিতে কোথা যায় কেবা,
স্বপ্ন আসিয়া রচি দেয় তার
                   রূপে মায়া।

আমার     নয়ন-ভুলানো এলে।
আমি       কী হেরিলাম হৃদয় মেলে।
                     শিউলিতলার পাশে পাশে
                     ঝরা ফুলের রাশে রাশে
                     শিশির-ভেজা ঘাসে ঘাসে
                           অরুণ-রাঙা-চরণ ফেলে
                           নয়ন-ভুলানো এলে।
আলোছায়ার আঁচলখানি
              লুটিয়ে পড়ে বনে বনে,
ফুলগুলি ওই মুখে চেয়ে
              কী কথা কয় মনে মনে।
                           তোমায় মোরা করব বরণ,
                           মুখের ঢাকা করো হরণ,
                           ওই টুকু ওই মেঘাবরণ
                                  দু হাত দিয়ে ফেলো ঠেলে।
                                  নয়ন-ভুলানো এলে।
বনদেবীর দ্বারে দ্বারে
       শুনি গভীর শঙ্খধনি,
আকাশবীণার তারে তারে
       জাগে তোমার আগমনী।
              কোথায় সোনার নূপুর বাজে,
              বুঝি আমার হিয়ার মাঝে,
              সকল ভাবে সকল কাজে
                     পাষাণ-গালা সুধা ঢেলে--
                     নয়ন-ভুলানো এলে।