হে সকল ঈশ্বরের পরম ঈশ্বর, তপোবনতরুচ্ছায়ে মেঘমন্দ্রস্বর ঘোষণা করিয়াছিল সবার উপরে অগ্নিতে, জলেতে, এই বিশ্বচরাচরে, বনস্পতি ওষধিতে এক দেবতার অখন্ড অক্ষয় ঐক্য। সে বাক্য উদার এই ভারতেরি। যাঁরা সবল স্বাধীন নির্ভয় সরলপ্রাণ, বন্ধনবিহীন সদর্পে ফিরিয়াছেন বীর্যজ্যোতিষ্মান লঙ্ঘিয়া অরণ্য নদী পর্বত পাষাণ তাঁরা এক মহান বিপুল সত্য-পথে তোমারে লভিয়াছেন নিখিল জগতে। কোনোখানে না মানিয়া আত্মার নিষেধ সবলে সমস্ত বিশ্ব করেছেন ভেদ।
মিথ্যে তুমি গাঁথলে মালা নবীন ফুলে, ভেবেছ কি কণ্ঠে আমার দেবে তুলে? দাও তো ভালোই, কিন্তু জেনো হে নির্মলে, আমার মালা দিয়েছি ভাই সবার গলে। যে-ক'টা ফুল ছিল জমা অর্ঘ্যে মম উদ্দেশেতে সবায় দিনু-- নমো নমঃ। কেউ বা তাঁরা আছেন কোথা কেউ জানে না, কারো বা মুখ ঘোমটা-আড়ে আধেক চেনা। কেউ বা ছিলেন অতীত কালে অবন্তীতে, এখন তাঁরা আছেন শুধু কবির গীতে। সবার তনু সাজিয়ে মাল্যে পরিচ্ছদে কহেন বিধি "তুভ্যমহং সম্প্রদদে'। হৃদয় নিয়ে আজ কি প্রিয়ে হৃদয় দেবে? হায় ললনা, সে প্রার্থনা ব্যর্থ এবে। কোথায় গেছে সেদিন আজি যেদিন মম তরুণ-কালে জীবন ছিল মুকুলসম, সকল শোভা সকল মধু গন্ধ যত বক্ষোমাঝে বন্ধ ছিল বন্দীমত। আজ যে তাহা ছড়িয়ে গেছে অনেক দূরে-- অনেক দেশে, অনেক বেশে, অনেক সুরে। কুড়িয়ে তারে বাঁধতে পারে একটিখানে এমনতরো মোহন-মন্ত্র কেই বা জানে! নিজের মন তো দেবার আশা চুকেই গেছে, পরের মনটি পাবার আশায় রইনু বেঁচে।