কার পানে মা, চেয়ে আছ মেলি দুটি করুণ আঁখি। কে ছিঁড়েছে ফুলের পাতা, কে ধরেছে বনের পাখি। কে কারে কী বলেছে গো, কার প্রাণে বেজেছে ব্যথা-- করুণায় যে ভরে এল দুখানি তোর আঁখির পাতা। খেলতে খেলতে মায়ের আমার আর বুঝি হল না খেলা। ফুলের গুচ্ছ কোলে প'ড়ে-- কেন মা এ হেলাফেলা। অনেক দুঃখ আছে হেথায়, এ জগৎ যে দুঃখে ভরা-- তোমার দুটি আঁখির সুধায় জুড়িয়ে গেল নিখিল ধরা। লক্ষ্মী আমায় বল্ দেখি মা, লুকিয়ে ছিলি কোন্ সাগরে। সহসা আজ কাহার পুণ্যে উদয় হলি মোদের ঘরে। সঙ্গে করে নিয়ে এলি হৃদয়-ভরা স্নেহের সুধা, হৃদয় ঢেলে মিটিয়ে যাবি এ জগতের প্রেমের ক্ষুধা। থামো, থামো, ওর কাছেতে ক'য়ো না কেউ কঠোর কথা, করুণ আঁখির বালাই নিয়ে কেউ কারে দিয়ো না ব্যথা। সইতে যদি না পারে ও, কেঁদে যদি চলে যায়-- এ-ধরণীর পাষাণ-প্রাণে ফুলের মতো ঝরে যায়। ও যে আমার শিশিরকণা, ও যে আমার সাঁঝের তারা-- কবে এল কবে যাবে এই ভয়তে হই রে সারা।
আমার ব্যথা যখন আনে আমায় তোমার দ্বারে তখন আপনি এসে দ্বার খুলে দাও ডাকো তারে। বাহুপাশের কাঙাল সে যে, চলেছে তাই সকল ত্যেজে, কাঁটার পথে ধায় সে তোমার অভিসারে; আপনি এসে দ্বার খুলে দাও ডাকো তারে। আমার ব্যথা যখন বাজায় আমায় বাজি সুরে সেই গানের টানে পার না আর রইতে দূরে। লুটিয়ে পড়ে সে গান মম ঝড়ের রাতের পাখি সম, বাহির হয়ে এস তুমি অন্ধকারে; আপনি এসে দ্বার খুলে দাও ডাকো তারে।