আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে একতারা তার দেয় কি সাড়া আমার গানে কে জানে॥ আমার নদীর যে ঢেউ ওগো জানে কি কেউ যায় বহে যায় কাহার পানে। কে জানে॥ যখন বকুল ঝ'রে আমার কাননতল যায় গো ভ'রে তখন কে-আসে-যায় সেই বনছায়ায়, কে সাজি তার ভরে আনে। কে জানে॥
আমার প্রাণের 'পরে চলে গেল কে বসন্তের বাতাসটুকুর মতো। সে যে ছুঁয়ে গেল, নুয়ে গেল রে-- ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত। সে চলে গেল, বলে গেল না-- সে কোথায় গেল ফিরে এল না। সে যেতে যেতে চেয়ে গেল কী যেন গেয়ে গেল-- তাই আপন-মনে বসে আছি কুসুমবনেতে। সে ঢেউয়ের মতন ভেসে গেছে, চাঁদের আলোর দেশে গেছে, যেখান দিয়ে হেসে গেছে, হাসি তার রেখে গেছে রে-- মনে হল আঁখির কোণে আমায় যেন ডেকে গেছে সে। আমি কোথায় যাব, কোথায় যাব, ভাবতেছি তাই একলা বসে। সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ঘোর। সে প্রাণের কোথায় দুলিয়ে গেল ফুলের ডোর। কুসুমবনের উপর দিয়ে কী কথা সে বলে গেল, ফুলের গন্ধ পাগল হয়ে সঙ্গে তারি চলে গেল। হৃদয় আমার আকুল হল, নয়ন আমার মুদে এলে রে-- কোথা দিয়ে কোথায় গেল সে॥
আমার যাবার বেলাতে সবাই জয়ধ্বনি কর্। ভোরের আকাশ রাঙা হল রে, আমার পথ হল সুন্দর ॥ কী নিয়ে বা যাব সেথা ওগো তোরা ভাবিস নে তা, শূন্য হাতেই চলব বহিয়ে আমার ব্যাকুল অন্তর ॥ মালা প'রে যাব মিলনবেশে, আমার পথিকসজ্জা নয়। বাধা বিপদ আছে মাঝের দেশে, মনে রাখি নে সেই ভয়। যাত্রা যখন হবে সারা উঠবে জ্বলে সন্ধ্যাতারা, পূরবীতে করুণ বাঁশরি দ্বারে বাজবে মধুর স্বর ॥