মেঘ বলেছে 'যাব যাব', রাত বলেছে 'যাই', সাগর বলে 'কূল মিলেছে-- আমি তো আর নাই' ॥ দুঃখ বলে 'রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে', আমি বলে 'মিলাই আমি আর কিছু না চাই' ॥ ভুবন বলে 'তোমার তরে আছে বরণমালা', গগন বলে 'তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা'। প্রেম বলে যে 'যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে', মরণ বলে 'আমি তোমার জীবনতরী বাই' ॥
আঁধার রাতে একলা পাগল যায় কেঁদে। বলে শুধু, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে ॥ আমি যে তোর আলোর ছেলে, আমার সামনে দিলি আঁধার মেলে, মুখ লুকালি-- মরি আমি সেই খেদে ॥ অন্ধকারে অস্তরবির লিপি লেখা, আমারে তার অর্থ শেখা। তোর প্রাণের বাঁশির তান সে নানা সেই আমারই ছিল জানা, আজ মরণ-বীণার অজানা সুর নেব সেধে ॥
ওরে প্রজাপতি, মায়া দিয়ে কে যে পরশ করল তোরে অস্তরবির তুলিখানি চুরি ক'রে॥ হাওয়ার বুকে যে চঞ্চলের গোপন বাসা বনে বনে বয়ে বেড়াস তারি ভাষা, অপ্সরীদের দোলের খেলার ফুলের রেণু পাঠায় কে তোর পাখায় ভ'রে॥ যে গুণী তার কীর্তিনাশার বিপুল নেশায় চিকন রেখার লিখন মেলে শূন্যে মেশায়, সুর বাঁধে আর সুর যে হারায় পলে পলে-- গান গেয়ে যে চলে তারা দলে দলে-- তার হারা সুর নাচের নেশায় ডানাতে তোর পড়ল ঝরে॥