যখন তুমি বাঁধছিলে তার সে যে বিষম ব্যথা; আজ বাজাও বীণা, ভুলাও ভুলাও সকল দুখের কথা। এতদিন যা সংগোপনে ছিল তোমার মনে মনে আজকে আমার তারে তারে শুনাও সে বারতা। আর বিলম্ব কোরো না গো ওই যে নেবে বাতি। দুয়ারে মোর নিশীথিনী রয়েছে কান পাতি। বাঁধলে যে সুর তারায় তারায় অন্তবিহীন অগ্নিধারায়, সেই সুরে মোর বাজাও প্রাণে তোমার ব্যাকুলতা।
তবু কি ছিল না তব সুখদুঃখ যত, আশা নৈরাশ্যের দ্বন্দ্ব আমাদেরি মতো, হে অমর কবি! ছিল না কি অনুক্ষণ রাজসভা-ষড়্চক্র, আঘাত গোপন? কখনো কি সহ নাই অপমানভার, অনাদর, অবিশ্বাস, অন্যায় বিচার, অভাব কঠোর ক্রূর--নিদ্রাহীন রাতি কখনো কি কাটে নাই বক্ষে শেল গাঁথি? তবু সে সবার ঊর্ধ্বে নির্লিপ্ত নির্মল ফুটিয়াছে কাব্য তব সৌন্দর্যকমল আনন্দের সূর্য-পানে; তার কোনো ঠাঁই দুঃখদৈন্যদুর্দিনের কোনো চিহ্ন নাই। জীবনমন্থনবিষ নিজে করি পান অমৃত যা উঠেছিল করে গেছ দান।
মনে করো, তুমি থাকবে ঘরে, আমি যেন যাব দেশান্তরে। ঘাটে আমার বাঁধা আছে তরী, জিনিসপত্র নিয়েছি সব ভরি -- ভালো করে দেখ্ তো মনে করি কী এনে মা, দেব তোমার তরে। চাস কি মা, তুই এত এত সোনা -- সোনার দেশে করব আনাগোনা। সোনামতী নদীতীরের কাছে সোনার ফসল মাঠে ফ'লে আছে, সোনার চাঁপা ফোটে সেথায় গাছে -- না কুড়িয়ে আমি তো ফিরব না।
পরতে কি চাস মুক্তো গেঁথে হারে -- জাহাজ বেয়ে যাব সাগর-পারে। সেখানে মা, সকালবেলা হলে ফুলের 'পরে মুক্তোগুলি দোলে, টুপটুপিয়ে পড়ে ঘাসের কোলে -- যত পারি আনব ভারে ভারে। দাদার জন্যে আনব মেঘে-ওড়া পক্ষিরাজের বাচ্ছা দুটি ঘোড়া। বাবার জন্যে আনব আমি তুলি কনক-লতার চারা অনেকগুলি -- তোর তরে মা, দেব কৌটা খুলি সাত-রাজার-ধন মানিক একটি জোড়া।