তুমি আমার আঙিনাতে ফুটিয়ে রাখ ফুল। আমার আনাগোনার পথখানি হয় সৌরভে আকুল। ওগো ওই তোমারি ফুল। ওরা আমার হৃদয়পানে মুখ তুলে যে থাকে। ওরা তোমার মুখের ডাক নিয়ে যে আমারি নাম ডাকে। ওগো ওই তোমারি ফুল। তোমার কাছে কী যে আমি সেই কথাটি হেসে ওরা আকাশেতে ফুটিয়ে তোলে, ছড়ায় দেশে দেশে। ওগো ওই তোমারি ফুল। দিন কেটে যায় অন্যমনে,ওদের মুখে তবু প্রভু, তোমার মুখের সোহাগবাণী ক্লান্ত না হয় কভু। ওগো ওই তোমারি ফুল। প্রাতের পরে প্রাতে ওরা, রাতের পরে রাতে তোমার অন্তবিহীন যতনখানি বহন করে মাথে। ওগো ওই তোমারি ফুল। হাসিমুখে আমার যতন নীরব হয়ে যাচে। তোমার অনেক যুগের পথ-চাওয়াটি ওদের মুখে আছে। ওগো ওই তোমারি ফুল।
মধ্যাহ্নে বিজন বাতায়নে সুদূর গগনে কী দেখে সে ধানের খেতের পরপারে-- নিরালা নদীর পথে দিগন্তে সবুজ অন্ধকারে যেখানে কাঁঠাল জাম নারিকেল বেত প্রসারিয়া চলেছে সংকেত অজানা গ্রামের, সুখ দুঃখ জন্ম মৃত্যু অখ্যাত নামের। অপরাহ্নে ছাদে বসি এলোচুল বুকে পড়ে খসি, গ্রন্থ নিয়ে হাতে উদাস হয়েছে মন সে যে কোন্ কবিকল্পনাতে। সুদূরের বেদনায় অতীতের অশ্রুবাষ্প হৃদয়ে ঘনায়। বীরের কাহিনী না-দেখা জনের লাগি তারে যেন করে বিরহিণী। পূর্ণিমানিশীথে স্রোতে-ভাসা একা তরী যবে সকরুণ সারিগীতে ছায়াঘন তীরে তীরে সুপ্তিতে সুরের ছবি আঁকে উৎসুক আকাঙক্ষা জেগে থাকে নিষুপ্ত প্রহরে, অহৈতুক বারিবিন্দু ঝরে আঁখিকোণে; যুগান্তরপার হতে কোন্ পুরাণের কথা শোনে। ইচ্ছা করে সেই রাতে লিপিখানি লেখে ভূর্জপাতে লেখনীতে ভরি লয়ে দুঃখে-গলা কাজলের কালি-- নাম কি খেয়ালী।