মনে করো, তুমি থাকবে ঘরে, আমি যেন যাব দেশান্তরে। ঘাটে আমার বাঁধা আছে তরী, জিনিসপত্র নিয়েছি সব ভরি -- ভালো করে দেখ্ তো মনে করি কী এনে মা, দেব তোমার তরে। চাস কি মা, তুই এত এত সোনা -- সোনার দেশে করব আনাগোনা। সোনামতী নদীতীরের কাছে সোনার ফসল মাঠে ফ'লে আছে, সোনার চাঁপা ফোটে সেথায় গাছে -- না কুড়িয়ে আমি তো ফিরব না।
পরতে কি চাস মুক্তো গেঁথে হারে -- জাহাজ বেয়ে যাব সাগর-পারে। সেখানে মা, সকালবেলা হলে ফুলের 'পরে মুক্তোগুলি দোলে, টুপটুপিয়ে পড়ে ঘাসের কোলে -- যত পারি আনব ভারে ভারে। দাদার জন্যে আনব মেঘে-ওড়া পক্ষিরাজের বাচ্ছা দুটি ঘোড়া। বাবার জন্যে আনব আমি তুলি কনক-লতার চারা অনেকগুলি -- তোর তরে মা, দেব কৌটা খুলি সাত-রাজার-ধন মানিক একটি জোড়া।
আমি শুধু বলেছিলেম -- "কদম গাছের ডালে পূর্ণিমা-চাঁদ আটকা পড়ে যখন সন্ধেকালে তখন কি কেউ তারে ধরে আনতে পারে।' শুনে দাদা হেসে কেন বললে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাইকো বোকা। চাঁদ যে থাকে অনেক দূরে কেমন করে ছুঁই; আমি বলি, "দাদা, তুমি জান না কিচ্ছুই। মা আমাদের হাসে যখন ওই জানলার ফাঁকে তখন তুমি বলবে কি, মা অনেক দূরে থাকে।' তবু দাদা বলে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাই তো বোকা।' দাদা বলে, "পাবি কোথায় অত বড়ো ফাঁদ।' আমি বলি, "কেন দাদা, ওই তো ছোটো চাঁদ, দুটি মুঠোয় ওরে আনতে পারি ধরে।' শুনে দাদা হেসে কেন বললে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাই তো বোকা। চাঁদ যদি এই কাছে আসত দেখতে কত বড়ো।' আমি বলি, "কী তুমি ছাই ইস্কুলে যে পড়। মা আমাদের চুমো খেতে মাথা করে নিচু, তখন কি আর মুখটি দেখায় মস্ত বড়ো কিছু।' তবু দাদা বলে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাই তো বোকা।'